UP Chairman

১৫৩ রোহিঙ্গাকে জন্মসনদ দেওয়ায়, সাময়িক বরখাস্ত ইউপি চেয়ারম্যান

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পরিষদ থেকে ১৫৩ রোহিঙ্গাকে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়ায় ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গত ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সিনিয়র সহকারী সচিব এ.কে.এম আনিছুজ্জামান স্বাক্ষারিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা যায়।

জানা যায়, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আছিয়া বিবি (২৭) নামে এক রোহিঙ্গা নারী পাসপোর্ট করতে যান। তার জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় মৌলভীবাজার জেলার রাজনগরের ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদে নিবন্ধিত জন্মনিবন্ধন সনদ দেখিয়ে পাসপোর্ট করতে গেলে সেখানকার কর্তৃপক্ষের হাতে তিনি আটক হন। আটক নারী জিজ্ঞাসাবাদে জানান কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার আলী যোহার ও আম্বিয়া খাতুন দম্পতির মেয়ে।

এ বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য সেখানকার কর্তৃপক্ষ মৌলভীবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাঠান। সেখান থেকে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে তথ্য অনুসন্ধানে পাঠানো হয় । ইউএনও ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সচিব পাপড়ি দত্তকে কার্যালয়ে ডেকে এনে এ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জেনে ওই ইউনিয়নের জন্মনিবন্ধনের আইডি নিষ্ক্রিয় করে রাখার নির্দেশ দেন। তখন প্রদান করা বেশ কিছু জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয় রাজনগর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষের। যাচাই বাছাই করে ওই সময়ের উপজেলার নির্বাহী অফিসার দেখতে পান ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেওয়া ১৫৩টি জন্ম নিবন্ধন করাা হয়েছে। তাদের সকলকে রোহিঙ্গা হিসেবে সন্দেহ করা হয়।

এ বিষয়ে ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস রাজনগর থানায় সাধারণ ডায়রি (নং ৯৭৪) করেন। রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস বলেন, সাময়িক বরখাস্তের চিঠি পেয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ১০ দিনের কারণ দর্শানোর জবাব দিয়েছি।

তিনি বলেন, সার্ভার হ্যাক করে ভুয়া নিবন্ধন করা হয়েছে। এ সব নিবন্ধনে ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যাড ব্যবহার করা হলেও আমার কিংবা সচিবের স্বাক্ষর নেই।

রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জন্মনিবন্ধনের সার্ভারের কার্যক্রম ওটিপি ভিত্তিক। ওটিপি আসার পর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান যাচাই করে নিবন্ধনের সুপারিশ করতে হয়। তাই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া করা সম্ভব নয়। এ বিষয়টি রেজিস্ট্রার জেনারেল এর কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হয়। রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর পর স্থানীয় সরকার বিভাগ গত ২৪ এপ্রিল ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাসকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি হরা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার এক নম্বর ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (নিবন্ধক) নকুল চন্দ্র দাস অসৎ উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন করায় স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী রেজিস্ট্রার জেনারেল জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেন। যেহেতু ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় প্রতীয়মান হওয়ায় চেয়ারম্যান কর্তৃক সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থী। আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে স্বীয় পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) মো. যাহিদ হোসেন জানান, এই ঘটনার তদন্তে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব এ কে এম আনিছুজ্জামান জানান, রেজিস্ট্রার জেনারেল এর কাছ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ফতেপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাসকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালামের সঙ্গে এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে বুধবার বিকেল ৪টায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালামের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

Scroll to Top