৪ টাকার ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়

বৃহস্পতিবার রাত ১১টা, ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস ট্রেনটি তেজগাঁও স্টেশনে এসে থামল। মুহূর্তেই সরগরম হয়ে উঠল চারদিক। ট্রেনের বগি থেকে নামানো ডিমের কেস। স্টেশন থেকে এগুলো চলে যাচ্ছে পাশে থাকা আড়তগুলোয়। ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ এলাকার ডিম এই পথে আসে। এ ছাড়া ভ্যানে করেও ডিম আসে। রাত ১০টার পর থেকে ডিমের বাজার জমতে শুরু করে। ১২টার দিকে পুরো জমে ওঠে। ভোর পর্যন্ত অনেক বেচাকেনা হয়।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, খামার পর্যায়ে প্রতি পিস মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৪ টাকা করে। আড়তে এগুলো বিক্রি হয় ৫ টাকা করে। পাইকারি ডিম সরবরাহকারীরা প্রতি পিস বিক্রি করেন ৬ টাকা করে। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা করে। এগুলো সিদ্ধ করে বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ১৫ টাকা। হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোয় রান্না করা ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ২০ টাকা।

খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম এত বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে সরবরাহ চেইনকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তিন-চার দফা হাতবদল হয়ে ডিম যাচ্ছে ভোক্তার কাছে। প্রতি দফায় হাতবদলের সময় বেড়ে যাচ্ছে ডিমের দাম। এ ছাড়া পচে বা ভেঙে যাওয়ার কারণেও অনেক ডিম নষ্ট হচ্ছে। এতেও বাড়ছে দাম।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সহসভাপতি হারুন অর রশিদ জানান, তেজগাঁও ডিমের আড়তে প্রায় ৪৫ জন পাইকারি ব্যবসায়ী আছেন। খুচরা দোকান আছে ২০-২৫টি। প্রতিদিন এখানে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার ডিম পাইকারি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সংগঠনের প্রত্যেক পাইকারি ব্যবসায়ীর যানবাহন আছে, যা ডিম পরিবহনের কাজে ব্যবহার হয়। একেক গাড়িতে ৮০ হাজার পিস ডিম পরিবহন করা যায়। সব মিলিয়ে ৪৫টি গাড়িতে প্রতিদিন ডিম আসে।

এই হিসাবে প্রতিদিন ৩৬ লাখ পিস ডিম বিক্রি করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে বেশিরভাগ ডিম সংগ্রহ করি ময়মনসিংহের ভালুকা, কাপাসিয়া, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ থেকে। তাদের মতে, ডিম ব্যবসা অনেক লাভজনক। কিন্তু ঝুঁঁকির পরিমাণ বেশি। মাঝেমধ্যে গাড়ি ডাকাতের কবলে পড়ে, সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে ডিম ভেঙে যায়। ঢাকার কাপ্তানবাজার, রায়েরবাজার, যাত্রাবাড়ীতেও ডিমের আড়ত গড়ে উঠেছে। সেগুলো থেকে পাইকারিভাবে ডিম সরবরাহ করা হচ্ছে।

ডিমের প্রতি হালি হাতবদলে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ছে। খুচরা পর্যায়ে দাম আরও বেশি বাড়ে। তেজগাঁও আড়ত থেকে প্রতি পিস ডিম ৬ টাকা করে নিয়ে সোনারগাঁও হোটেলের সামনের ফুটপাতে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করেন রাসেল। প্রতি পিস ১৫ টাকা। ৬ টাকার ডিম কিনে তিনি ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফুটপাতে ডিম বিক্রির জন্য তিন দফা চাঁদা দিতে হয়। ইদানীং নতুন যোগ হয়েছে হিজড়াদের চাঁদা। সব মিলিয়ে খরচ বেশি পড়ে। রাজধানীর কারওয়ানবাজার ও তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত কারওয়ানবাজারের বিভিন্ন আড়তে ভাঙা ডিম কেনার জন্য লোকজনের ভিড় লেগে যায়। বিশেষ করে বস্তি ও ফুটপাতের টোকাইরা কম দামে এই ডিম সংগ্রহ করে বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ফুটপাতের দোকানে সরবরাহ করে।

বেশিরভাগ নষ্ট ডিম দিয়েই সুস্বাদু পুডিং ও কেক তৈরি করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন হোটেলে সকালের নাস্তার মেন্যুতে ওমলেট, মামলেট, পোঁচ করা ডিমের নামে যা সরবরাহ করা হয়, তার প্রায় সব ডিমই থাকে ফাটা। খবর_দৈনিক আমাদের সময়

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, ০৮ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ