রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক ৫০ সংগঠনের চিঠি নিয়ে স্থানীয়দের উদ্বেগ

রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে মোবাইল ও ইন্টারনেট যোগাযোগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ স্থগিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক ৫০টি সংগঠন যে যৌথ চিঠি দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কক্সবাজারের স্থানীয়রা।

এই দাবি মেনে নেওয়া হলে তা ‘আত্মঘাতী’ হবে বলেও মনে করছেন কক্সবাজারের সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

তারা বলছেন, ‘বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বারবার বলছেন, জনসমাগম এড়ানোর জন্য, ঘরে থাকার জন্য। এ ক্ষেত্রে ১১ লক্ষ মানুষকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য কাঁটাতারের বেড়া ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কাজেই এই সময়ে এসে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ স্থগিত করার দাবি একেবারেই অযৌক্তিক।’

গত বৃহস্পতিবার আর্টিকেল ১৯, আসিয়ান পার্লামেনটারিয়ন ফর হিউম্যান রাইটস, অ্যাকশন করপস, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, বিওন্ড বর্ডারস মালয়েশিয়া, ব্রিটিশ রোহিঙ্গা কমিউনিটি ইউকে, ফরটি রাইটস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক ৫০টি সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে যৌথভাবে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া থামাতে মুঠোফোনের দ্রুতগতির ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অবাধ ইন্টারনেট স্বাস্থ্য কর্মীদেরই সেবা দিতে ভালো ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া শরণার্থীশিবিরে যারা কাজ করছেন তাদের জন্যও এটি প্রয়োজন।

চিঠিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের চারপাশে বেড়া নির্মাণের কাজ মহামারি শুরু হওয়ার আগেই শুরু হয়। এই বেড়া নির্মাণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে তীব্র ভয় ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে যা রোহিঙ্গা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের অপরাধ দমন করতে শিবিরগুলোর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া থাকা জরুরী। কারণ প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে রোহিঙ্গারা আশ্রয় শিবির থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। এছাড়া খুন, হত্যা, মাদক ও নারী-শিশু পাচারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তারা জড়িয়ে পড়েছে তারা। মোবাইল ব্যবহার করে ক্যাম্পের ভেতরে মাদক ও মানব পাচার এবং হাটবাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, তাঁর কাঁটার বেড়া দিয়ে রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট স্থানে আটকে রাখলে তারা অপরাধ করার সুযোগ কম পাবে। আর যেহেতু সারা বিশ্ব কোভিড-১৯ ভাইরাসের মহামারিতে ভুগছে, সেহেতু এই প্রায় ১১ লক্ষ মানুষকে অবাধে চলাফেরা করতে দেওয়া অনেকটা হুমকি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোহিঙ্গা প্রত্যবাসন সংগ্রাম পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, কাঁটাতার বা দেয়াল নির্মাণ করে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক ৫০ সংগঠন যে দাবী তুলেছে তা অযৌক্তিক এবং রাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী। এই সময়ে রোহিঙ্গাদেরও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা দরকার। কোভিড-১৯ বিষয়েও সচেতন করা দরকার। সামাজিক দূরত্ব মানার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা দরকার। এই সেবাগুলো, বা মানবিক সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল নেটওয়ার্কের কোন প্রয়োজন নেই। মোবাইল নেটওয়ার্কের অপব্যবহার করে আরও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে।

‘‘এমতাবস্থায় কাঁটাতার বা দেয়াল নির্মাণ করে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক ৫০ সংগঠন যে দাবি তুলেছে তা অযৌক্তিক এবং রাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থি।”