রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হলো শাহান আরা আব্দুল্লাহকে

১৫ আগস্ট কতিপয় চক্রান্তকারী সেনা সদস্যদের হাতে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে খুন হন। ওই রাতে মিন্টো রোডের বাসায় ঘাতকদের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শাহান আরা বেগমের চার বছরের ছেলে সুকান্ত আবদুল্লাহ। গুলিবিদ্ধ হয়েও সেই রাতে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান শাহান আরা বেগম।

শহীদ জননী শাহান আরা বেগম ৭০ বছর বয়সে রবিবার রাতে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তিনি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি স্বামী, তিন ছেলে, এক মেয়েসহ আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য শুভাকাঙ্খী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন।

পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী পদমর্যাদা) ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপির স্ত্রী ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মা মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টার দিকে বরিশাল নগরীর মুসলিম গোরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে সকাল পৌনে ৮টার দিকে মুসলিম গোরস্থানে পৌঁছে জানাজার আগে পুলিশের একটি চৌকস দল তার প্রতি গার্ড অব অনার প্রদান করে। জানাজা শেষে সাহান আরা বেগমের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

জানাজায় মরহুমার স্বামী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, ছেলে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, মেজ ছেলে মঈন আব্দুল্লাহ, ছোট ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আশিক আব্দুল্লাহ, জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুক মো. ইউনুসসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সাহান আরা বেগমের রাজনৈতিক জীবন ছিল বর্ণাঢ্য। প্রথম জীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি বরিশাল মহিলা কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সঙ্গে বিয়ের পর তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি তিনি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগেরও সহসভাপতি ছিলেন। সাহান আরা বেগম মুক্তিযোদ্ধা ও একজন সাংস্কৃতিক সংগঠক ছিলেন।

পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, সাহান আরা বেগম বেশ কিছুদিন ধরে সংসদ ভবন এলাকার সরকারি বাসভবনে অবস্থান করছিলেন। তিনি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। গত শুক্রবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক কাইয়ুম খান কায়সার জানান, সাহান আরা বেগমের মৃত্যুতে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৪ দিনের শোক পালন করা হবে। বরিশাল দলীয় কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা উত্তোলন ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। এছাড়া দলের নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন।

এদিকে শাহান আরা আবদুল্লাহর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করীম এমপি, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ছাদেকুল আরেফিন, বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বরিশাল প্রেসক্লাব, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন (জেইবি), রিপোর্টস ইউনিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।