দুর্নীতিবাজ যেই হোক না কেন তাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না: বাহাউদ্দিন নাছিম

দুর্নীতিবাজ যেই হোক না কেন তাকে কোন ধরনের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সেটা নিজ দলের হোক, অন্য দলের হোক কিংবা প্রশাসনের কেউ হোক। দুর্নীতিবাজদের কোন নিস্তার নেই। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতি। দুর্নীতিবাজদের কোন ধরনের রেহাই দেওয়া হবে না। এটাই আমাদের শপথ, এটাই প্রত্যয়।

গতকাল রাতে করোনাকালীন সংকট নিয়ে বিশেষ ওয়েবিনার ‘বিয়ন্ড দ্যা প্যানডেমিক’ এর নবম পর্বে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এবারের পর্বের আলোচনার বিষয় ‘করোনা সংকট মোকাবিলায় তৃণমূলের ভূমিকা’।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে আরো যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, ভোলা- ৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, কক্সবাজার- ২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, খুলনা- ৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু এবং বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দুর্নীতিবাজদের জনগণের সামনে চিহ্নিত করে এমন শাস্তি নিশ্চিত করা হবে যাতে কেউ আর দুর্নীতি করার সাহস না পায়। কারণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতি। এ ক্ষেত্রে যেমন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জন্য প্রযোজ্য, তেমনি প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের জন্যও প্রযোজ্য এমন নিদের্শনা প্রযোজ্য ছিল প্রধানমন্ত্রীর। করোনার শুরু থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এ ক্ষেত্রে যে কথাটি এসেছে, কিছু দুর্নীতিবাজকে আমরা দেখতে পেরেছি। সে কে, কোন দল করে, তা কিন্তু দেখা হয়নি। যারাই দুর্নীতিবাজ তাদেরকেই আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে। দুর্নীতি যারাই হোক, দলীয় নেতাকর্মী কিংবা জনপ্রতিনিধি তাদেরকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। কাউকে এক চুল পরিমান ছাড় দিব না। এটাই শপথ। এটাই প্রত্যয়।

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আরও বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সমন্বয় করে রিলিফ কার্যক্রম কমিটি গঠন, রিলিফ প্রদানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। সাধারণ মানুষকে সচেতন করা থেকে শুরু করে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কার্পণ্য করেনি। আওয়ামী লীগের দুর্দিনের নেতা-কর্মীরা মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে রিলিফ কার্যক্রম এখন পর্যন্ত পরিচালনা করছেন।

তিনি আরও বলেন, দেশ ও দলের দুর্দিনে আওয়ামী লীগের তৃনমূল কর্মীরা বারবার ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সমগ্র আন্দোলন সংগ্রামে আমাদের এই দুর্দিনের নেতা কর্মীরাই সবার আগে এগিয়ে এসেছেন। আমাদের দলীয় জনপ্রতিনিধিরা তৃনমূলের নেতা কর্মীদের সাথে সমন্বয় করে জনগণের পাশে থেকেছে, এখনও আছে। করোনামুক্ত বাংলাদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের তৃণমূলের নেতা কর্মীরা ও জনপ্রতিনিধিরা যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, আমাদের দফতরের হিসেব অনুযায়ী সারাদেশের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এখন পযন্ত প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিই হলো অসহায় মানুষের পাশে থাকা, পাশে দাঁড়ানো, মানুষকে সহায়তা করা। আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সব সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

আলোচনায় যুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, আপনারা জানেন, চট্টগ্রাম ইতিমধ্যে করোনার হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, ঢাকার পরেই চট্টগ্রামের অবস্থান। আসলে করোনা মোকাবেলা করার জন্য যে প্রস্তুতি তা কোথাও ছিলো না, স্বাভাবিক কারণে বাংলাদেশেসহ চট্টগ্রামে কোথাও ছিলো না। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অত্যন্ত সুনিপুণ নেতৃত্বে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য যে ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন ইতিমধ্যে তিনি সব গ্রহণ করেছেন।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে আপনারা জানেন আমরা চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রচুর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। কোভিড-১৯ একটি সংক্রামক ব্যাধি। প্রথম দিকে মানুষের মাঝে ব্যাপক ধারণা ছিলো, একটা হাসপাতালে কোভিড এবং নন-কোভিড চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না। সেই ধারণাটা চট্টগ্রামে খুব কাজ করেছিলো। শুরু দিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫০ শয্যা নিয়ে আমরা করোনার চিকিৎসা শুরু করেছিলাম, ধীরে ধীরে শয্যা সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সেখানে এখন ১৬০ টি শয্যা রয়েছে, সাথে যুক্ত হয়েছে ১০ শয্যার আইসিউ সেবা, চট্টগ্রাম মেডিকেলে ও প্রথমে স্বল্পসংখ্যাক বেড নিয়ে শুরু করলেও এখন সেখানে ১৫০টি আইসোলেশন সেবাসহ আইসিইউ সেবা চালু হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আরো একাধিক হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার সাথে যুক্ত করা হয়েছে। বেসরকারী হাসপাতাল গুলো সরকারের নির্দেশে এখন সেবা দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমি যেহেতু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি সেই হিসেবে স্বাভাবিক কারণে আমার উপর নির্ভর করে দলের ভাবমূর্তি, দলের গ্রহণযোগ্যতা এবং পাশাপাশি সরকারের একটা ভাবমুর্তি নির্ভর করে। সেই কারণে আমি প্রথম থেকেই গুরুত্ব দিয়ে, অগ্রাধিকার দিয়ে, আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একদম শুরু থেকে চট্টগ্রামের রাজপথে, চট্টগ্রামে ৪১টি ওয়ার্ডে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে গিয়েছি।

ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি বলেন, আমরা অনেক দুর্যোগ দেখেছি, কিন্তু করোনার মত নতুন দুর্যোগ এই বারেই প্রথম। নতুন এই দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা একেবারে প্রস্তুত ছিলাম না, কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা কাজ করছি এই সংকট মোকাবিলায়। আমরা ছিলাম ঐক্যবদ্ধ জাতি, কিন্তু করোনা শিক্ষা দিয়েছে একে অপরের দূরে থাকার। আমরা চেষ্টা করছি এই সংকট মোকাবিলায়। করোনা সংকটের এই সময়ে আমরা আমাদের নির্বাচনী এলাকায় সরকারের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সাহায্য কার্যক্রম চালিয়েছি কর্মহীন মানুষের জন্য।