বিনামূল্যে করোনা পরিক্ষা আরও বাড়াতে বলছে টিআইবি

মহামারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সময় টেস্টের ওপর ফি আরোপের বিষয়টিকে বৈষম্যমূলক, অমানবিক ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যা দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ অবস্থায় বিনামূল্যে করোনা টেস্ট বরং আরো ব্যাপকভাবে বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

আজ বুধবার (৮ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবি এ তাগাদা দেয়।

এতে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে যখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তখন হঠাৎ করেই গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ফি আরোপের সিদ্ধান্ত জানায়। সংকটকালীন সময়ে এ অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তে সরকার জনগণকে পরীক্ষা করতেই অনুৎসাহিত করছে কি-না এমন প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়।

দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এ পদক্ষেপ বৈষম্যমূলক ও অমানবিক- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, যারা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তাদের জন্য আরোপিত ফি যৎসামান্য মনে হতেই পারে; কিন্তু যারা এক বেলা নিয়মিত খাবারেরই সংস্থান করতে পারেন না, তাদের জন্য এ ২০০ টাকাও বিশাল এক বোঝা। মূলতঃ দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষকে পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত করতেই এ সিদ্ধান্ত কি-না, তা ভাবতে হবে। এমন বৈষম্যমূলক ও অমানবিক সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, মহামারিকালে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা বলে কিছু নেই। যারা নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের তাগিদে পরীক্ষা করাতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য অবমাননাকর ও অবান্তর যুুক্তি হিসেবে সরকার ‘বিনা প্রয়োজনে ও বারবার’ পরীক্ষার চাহিদার অপবাদ দিচ্ছে। তাহলে কি সরকার চায়, যারা পরীক্ষা করবে তারা সবাই আক্রান্ত হোক! অথচ দেশে তথা বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্তের বড় একটা অংশ উপসর্গবিহীন হওয়ায় আরো অনেক বেশি সংখ্যক পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকৃত রোগীকে দ্রুত বিচ্ছিন্নকরণে বিশেষজ্ঞরা জোর তাগিদ দিচ্ছেন। টিআইবি মনে করে, ফি আরোপের এ সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী এবং মহামারি মোকাবিলায় সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, মহামারি মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো ফলপ্রসূ হওয়ার পূর্বশর্ত হলো- সেগুলো যেন নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্তভিত্তিক হয়। অথচ শুরু থেকেই এ বিষয়টি নিয়ে নানা ধোঁয়াশা তৈরি করা হয়েছে। পৃথিবীর যে কয়েকটা দেশে সবচেয়ে কম পরীক্ষা করা হচ্ছে, দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশ তার অন্যতম। তার ওপর ফি আরোপ করে পরীক্ষার সংখ্যাই কমিয়ে দেওয়া হলো, যাতে পরীক্ষার আওতার বাইরে চলে যাচ্ছেন দেশের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী।

তিনি বলেন, করোনা সংকট মোকাবিলা কার্যক্রমে তথ্য প্রবাহের নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যেই এ ফি আরোপ করা হয়েছে কি-না, এ প্রশ্ন ওঠাও অস্বাভাবিক নয়। যে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা কি, সেটা কোনোভাবেই জানা সম্ভব নয়। আর এ তথ্যের ভিত্তিতে মহামারি মোকাবিলায় সরকার যে পদক্ষেপ নিবে, নিশ্চিতভাবেই তা বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।

তথ্যের প্রবাহ ও যথার্থতা নিশ্চিত করতে পরীক্ষার সংখ্যা, আওতা ও পরিধি বাড়ানোর বিকল্প নেই। এর বিপরীত হলে লকডাউন, বিচ্ছিন্নকরণ, চিকিৎসা প্রস্তুতি গ্রহণ, আর্থ-সামাজিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ইত্যাদি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা তৈরি হবে, সার্বিকভাবে সংকটের মেয়াদ প্রলম্বিত হবে।