শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দৃঢ় হচ্ছেঃ আনিসুল হক

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নিজ সংসদীয় এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়াতে মুসলমানদের সহযোগিতায় শ্মশান উদ্ধার হওয়ার ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম উদাহরণ বলে আখ্যায়িত কয়েছেন তিনি। আজ সোমবার সকালে মোবাইল ফোনে সঙ্গে আলাপকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দৃঢ় হচ্ছে বলে আখ্যায়িত করেন।
তিনি আরো বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই শ্মশানে সৎকার করতে না পারার বিষয়টি জেনে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। শুরুতেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছি। পরে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা সব সময়ই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। আমরা সম্প্রীতি প্রিয় লোক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে গেছেন। কিন্তু মাঝখানে খুনি জিয়া আর বেগম জিয়া সেই সম্প্রীতি নষ্ট করেছেন। এ সময় জনমনে ভীতির সৃষ্টি হয়। এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার আছে বলেই সম্প্রীতি দৃঢ় করার কাজগুলো করা সম্ভব হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সকলে মিলে শ্মশান উদ্ধারের ঘটনাটি নিশ্চয় সারা দেশের মানুষের কাছে একটা ম্যাসেজ হিসেবে যাবে। শুধু এটি নয় হিন্দু ধর্মালম্বীদের অন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষায়ও আমি সজাগ আছি। এ বিষয়ে সব ধরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে উপজেলার রুপি গ্রামের শ্মশান উদ্ধারের ঘটনাকে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবে দেখছেন আখাউড়ার সর্বস্থরের মানুষ। শ্মশান উদ্ধারের ঘটনায় মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন আখাউড়ার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
আখাউড়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক দীপক কুমার ঘোষ বলেন, শ্মশান উদ্ধারের ঘটনাটি সারা দেশে একটি নজির হয়ে থাকবে। শ্মশান উদ্ধারে মূলত সেখানকার মুসলমানই এগিয়ে এসেছে। ঘটনা জানার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ায় আমরা বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের প্রতি। এ ছাড়া আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও ইউএনওর প্রতিও কৃতজ্ঞতা ওনারা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে শ্মশানটি উদ্ধারে ভূমিকা নিয়েছেন।
আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মো. তাকজিল খলিফা কাজল বলেন, শ্মশানটির উদ্ধার তৎপরতা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটা অনন্য উদাহরণ। আমাদের এলাকা আইনমন্ত্রীর সংসদীয় এলাকা। এখানে কেউ সম্প্রীতি বিনষ্ট করে রক্ষা পাবে না। উদ্ধারের বিষয়টি জানার পর মন্ত্রী মহোয়দয় খুবই খুশি হয়েছেন। মহৎকাজে সহযোগিতাকারিদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেখানকার মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এসে আমাকে বিষয়টি জানানোর পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে অবহিত করি। তিনি বলেছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপস নয়। সেই মোতাবেক প্রশাসনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
যেভাবে উদ্ধার
৮২ শতাংশের ওই শ্মশান উদ্ধারে শুরু থেকে ভূমিকা মুসলমানদের সম্প্রদায়ের মানুষের। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে রুটি গ্রামের বেশ কয়েকজন মুসলমান ব্যক্তি শ্মশান দখল বিষয়ে আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক তাকজিল খলিফা কাজলকে অবহিত করেন। পরবর্তীতে মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন স্থানীয় কয়েকজন হিন্দুকে নিয়ে মেয়রের কাছে আসেন ও এ বিষয়ে অবগত করেন। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ করার জন্য এ প্রতিবেদককেও আহবান জানানো হয় ওই আলোচনাকালে। পরে প্রতিবেদক ২৮ আগস্ট সরেজমিনে গিয়ে শ্মশানে সৎকার করতে গেলে প্রতিবেশি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর বাধার বিষয়টি স্থানীয়দের কাছ থেকে নিশ্চিত হন। এরই মধ্যে সার্বিক বিষয় অবগত করা হয় আইনমন্ত্রীকে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে প্রশাসনিকভাবে উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাগজপত্র ঘেঁটে জায়গাটি শ্মশানের নিশ্চিত হওয়ার পর রবিবার দুপুরে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্টদেরকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-এ-আলম সেখানে গিয়ে প্রথমে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে তিনি জায়গার মালিক দাবিকারীদেরকে কাগজ দেখাতে বললে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে লাল নিশান টানিয়ে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন শ্মশানের নামে দুটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন। আখাউড়ার থানার ওসি মো. রসুল আহমেদ নিজামীও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
:কালের কণ্ঠ