যেকোনো শিশুর অকাল মৃত্যু আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়: শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন যে, অপরাধীদের বিচার নিশ্চিতসহ শিশু নির্যাতন বন্ধে সরকার বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে এবং যেকোনো শিশুর অকাল মৃত্যু আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়।

সোমবার (৫ অক্টোবর) সকালে বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২০-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শিশুর জন্য নিরাপদ বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বে দেখি নানা ধরনের সংঘাত। যখন দেখি কোনো শিশুর অকাল মৃত্যু সেটা সত্যি আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। সেটা আমার দেশেই হোক বা বিদেশেই হোক, বঙ্গোপসাগরেই হোক, ভূমধ্যসাগরের পাড়েই হোক প্রতিটি ঘটনাই আমাদের নাড়া দেয়। কিন্তু আমরা চাই, শিশুদের জন্য এ পৃথিবীটা একটা নির্ভরযোগ্য, শান্তিপূর্ণ বাসযোগ্য স্থান হোক।

শিশু নির্যাতন বন্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। আমরা চাই, আমাদের শিশুরা নিরাপত্তা নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, কবি সুকান্তের ভাষায় বলতে চাই, এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গীকার। তার কথাটা সবসময় মনে রাখি। এ বিশ্বকে আমরা এমনভাবে তৈরি করতে চাই- আমাদের শিশুরা যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, চলতে পারে, উন্নত জীবন পেতে পারে, সুন্দর জীবন পেতে পারে, নিরাপদ জীবন পেতে পারে। আর শিক্ষা-দীক্ষায় সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়।

জ্ঞান অর্জনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে, বাঙালি জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে বিশ্বে চলবে। সেটাই আমরা চাই। কাজেই আজকের শিশুরা নিজেকে সেভাবেই গড়ে তুলবে। কিছু সমস্যা আসবে, কিন্তু সে সমস্যাগুলো অতিক্রম করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

করোনা সংক্রমণে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্কুল খুলতে পারছি না, বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না, এটা বাচ্চাদের জন্য সত্যি খুব কষ্টের। কারণ ঘরের মধ্যে বসে থাকা, কোনো কিছু করা বা আর কী করবে তারা? তবে যৌথ পরিবারের শিশুদের খবু একটা কষ্ট হয় না। তাদের কথা বলার একটা সুন্দর পরিবেশ থাকে, কথা বলার একটা সুযোগ পায়। কিন্তু যেখানে একা পরিবার, একা শিশু বা মাত্র এক ভাই বা দুই ভাই-বোন, এ রকম ছোট্ট পরিবার তাদের জন্য সত্যি খুব কষ্টকর। তারা কী করবে?

শিশুদের মানসিক চাপ কমাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে খেলাধুলা ও কাছাকাছি পার্কে ঘুরতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে অভিভাবকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে যেহেতু স্কুলে যেতে পারছে না তাই বাচ্চাদের অন্তত কাছাকাছি কোনো পার্ক বা কোথাও আপনাদের বাচ্চাদের দিনে এক ঘণ্টার জন্য হলেও একটু নিয়ে যাবেন। ছোটাছুটি করা, খেলাধুলা সেগুলো যেন তারা করতে পারে, সেই সুযোগটা সৃষ্টি করে দেওয়া আমি মনে করি। কারণ তাদের স্বাস্থ্যের জন্য, তাদের মানসিক অবস্থার দিক থেকে এটা খুবই দরকার।

বিনামূল্যে বই বিতরণ, উপবৃত্তি, বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনাসহ শিশুদের কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকি ইনাম, শিশু একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী রিদিতা নূর সিদ্দিকী, নাভিদ রহমান তূর্য।

Scroll to Top