ভবনগুলোকে কমপ্লায়েন্সের আওতায় আনতে হবে: মেয়র আতিক

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন যে, মহানগরী ঢাকায় দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হলে ভবনগুলোকে বিল্ডিং কোড ও সিটি করপোরেশনের অধীন ‘কমপ্লায়েন্স’ বা অনুশাসনের আওতায় আনতে হবে। ভবন ও সেখানে থাকা জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কমপ্লায়েন্সের কোনো বিকল্প নেই।

এমনটাই দাবি করেছেন তিনি। মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে এমনটা দাবি করেন আতিক।

‘নগর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: অগ্রগতি ও করণীয়’ শীর্ষক এ বৈঠকে অন্যতম আলোচকের বক্তব্যে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, পরিকল্পিত পল্লী উন্নয়নের ফলে গ্রাম অঞ্চলে এখন অনেক কিছু ঠিক থাকলেও শহরে অনেক কিছু ঠিক থাকে না। বিশেষ করে ঢাকার মতো অপরিকল্পিত নগরীকে পরিকল্পনায় নিয়ে আসাই এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এ শহরের বেশিরভাগ ভবনই অনিরাপদ। সেখানে কমপ্লায়েন্স নেই। এগুলোকে কমপ্লায়েন্সের আওতায় আনতে হবে। উন্নত দেশে ভবনগুলোকে মেয়র অফিস থেকে কমপ্লায়েন্স সনদপত্র নিতে হয়। আমাদের এখানে এমনটা নেই।

বিজিএমইএ সভাপতি হিসেবে গার্মেন্টস খাতে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে অভিজ্ঞতার আলোকে আতিক বলেন, রানা প্লাজা ধসের সময় আমি সদ্য বিজিএমইএ চেয়ারম্যান। তখন দেশের গার্মেন্টগুলোকে একর্ড অনুসারে কমপ্লায়েন্সের আওতায় আনতে হয়েছে আমাদেরকে। ঠিক সেইভাবে শহরের ভবনগুলোকেও কমপ্লায়েন্সের আওতায় আনতে হবে। একটি ভবনের নিজস্ব নিরাপত্তা থাকতে হবে। তার প্রকৌশলগত নিরাপত্তা থাকতে হবে। ভবনটিতে ইলেকট্রিক্যাল নিরাপত্তা, ফায়ার সেফটি থাকতে হবে। জরুরি অবস্থায় ভবনে থাকা বাসিন্দারা কী করবেন সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। সবমিলিয়ে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে। আর এটা ভবন মালিকদের নিজস্ব অর্থায়নেই করতে হবে। তারা তো বাণিজ্যিক উদ্দেশে ফ্লোর স্পেস ভাড়া দেন। তাহলে তারা কেন করবে না? যারা এটা করবে না তাদের ভবনে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হবে না এমন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

বৈঠকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, শহরের বেশিরভাগ ভবনেই পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণী ব্যবস্থা নেই। মাত্র ৮-১০ শতাংশ ভবনে ‘মোটামুটি সন্তোষজনক’ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দেখা যায়। আমরা যেগুলোকে ‘হাই রেইজ’ ভবন বলি সেগুলোর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত নিজস্ব ফায়ার ফাইটিংয়ে সক্ষম ব্যবস্থা থাকতে হবে। ভবনে ইন্টেগ্রেটেড ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম থাকতে হবে।

কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সভাপতিত্ব গোলটেবিল বৈঠক অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) ড. এ এম এম মাকসুদ কামাল, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ হেলালী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা আক্তার, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের ঢাকা ও কান্ট্রি পোর্টফোলিও ম্যানেজার আফরোজ মহল ও কান্ট্রি ডিরেক্টর অরলা এ মারফী।

বৈঠকে নগরের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মানিক কুমার সাহা। সবশেষে বৈঠকে সমাপনী বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মোহসীন।