লোকসমাগম হয় এমন স্থানে কেউ মাস্ক ছাড়া যাবেন না: শেখ হাসিনা

মহামারী করোনা প্রতিরোধে আবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, লোকসমাগম হয় এমন স্থানে কেউ মাস্ক ছাড়া যাবেন না। সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

গতকাল গণভবন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চুয়ালি এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার মাধ্যমে ব্যস্ত থাকতে হবে। যাতে বিদ্যালয় খুললে সবাই যথাযথভাবে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে পারে। অভিভাবকদের এ বিষয়ে যতœশীল হওয়া দরকার। তিনি বলেন, প্রতিটি শিশু যথাযথ শিক্ষার মাধ্যমে আগামী দিনে দেশের কর্ণধার হবে, তারা সুন্দর জীবন কাটাবে, আমরা এ লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। শিশুদের উন্নত ভবিষ্যৎ উপহার দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে তারা দেশের কর্ণধার হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা তাঁর সর্বকনিষ্ঠ ভাই শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আজ রাসেলের জন্মদিন। ১৯৬৪ সালে রাসেলের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু তার জীবনটা শেষ হয়ে যায়। একটি ফুল কুঁড়িতেই শেষ হয়ে যায়, রাসেল আর ফুটতে পারেনি। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে তাকে নির্মমভাবে চিরবিদায় নিতে হয়।

রাসেলের জন্মের সময়কার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাসেল যেদিন জন্ম নিয়েছে, সে দিনের কথাটা এখনো আমার মনে পড়ে। একটা ছোট্ট শিশু আসবে, আমাদের পরিবারে, আমি কামাল-জামাল, রেহানা- আমরা সবাই খুব উৎসাহিত এবং বেশ উত্তেজিত ছিলাম। কখন সেই শিশুটির কান্না আমরা শুনব, কখন তার আওয়াজটা পাব, কখন তাকে কোলে তুলে নেব। আর সেই ক্ষণটা যখন এলো, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের সময় ছিল। ছোট্ট শিশুটি আমাদের সবার চোখের মণি ছিল। শৈশবে বাবাকে কাছে না পাওয়ায় ছোট্ট শিশু রাসেলের বেদনার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, কী দুর্ভাগ্য তার, ’৬৪ সালের অক্টোবরের ১৮ তারিখ তার জন্ম। এরপর ’৬৬ সালে আবার বাবা যখন ৬ দফা দাবি দিলেন, তখন তিনি খুব ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ’৬৬ সালের মে মাসে তিনি (বঙ্গবন্ধু) বন্দী হয়ে গেলেন। ছোট্ট রাসেল কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবা কারাগারে। যখন সে একটু বড় হলো, তখন কারাগার থেকে বাবাকে কীভাবে নিয়ে আসবে, সে জন্য বাড়ি চল, বাড়ি চল বলে কান্নাকাটি করত। ’৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন আমার বাবা মুক্তি পান, তখন যে জিনিসটা সব সময় দেখতাম, রাসেল সর্বক্ষণ- মনে হয় যেন ওর ভিতরে একটা ভয় ছিল যে কোনো মুহূর্তে বুঝি বাবাকে হারাবে, তাই বাবা যেখানেই যেতেন, যে কাজই করতেন, খেলার ছলে কিছুক্ষণ পরপরই একবার করে সে দেখে আসত যে বাবা ঠিক আছেন তো। বাবা মিটিংয়ে থাক বা যেখানেই থাক, সে ছুটে ছুটে যেত।

রাসেলের নীরব কান্নার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, একাত্তর সাল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে। ঠিক সেই মুহূর্তে তাকে গ্রেফতার করা হলো। তারপর থেকে তিনি কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন, আমরা জানি না। বেঁচে আছেন কিনা সেটা জানাও আমাদের সম্ভব ছিল না। ১৯৭১ সালে শুধু জাতির পিতাকে বন্দী করা হয়নি, আমার মাকেও বন্দী করা হলো। রাসেলও তখন বন্দী। আমার ভাই কামাল মুক্তিযুদ্ধে চলে যাচ্ছে, একসময় জামালও গেরিলা কায়দায় বন্দীখানা থেকে চলে গেল মুক্তিযুদ্ধে। রাসেলের চোখে সব সময় পানি। ওইটুকু একটা ছোট্ট শিশু, সে তার কষ্টটা কাউকে বুঝতে দিত না। যদি জিজ্ঞেস করতাম, কী হয়েছে? বলত, চোখে কিছু একটা পড়ে গেছে। তার যে নীরব কান্না তা সে কখনো প্রকাশ করত না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরও ছোট থাকতেও রাসেল- আব্বা যখন জেলে, মাঝে-মধ্যে সে কান্নাকাটি করত, কিন্তু আমরা বুঝতাম না। হঠাৎ মধ্যরাতে, বিশেষ করে যেদিন আমরা কারাগারে দেখা করতে যেতাম, ওই দিনটা তার জন্য খুব কষ্টের ছিল। সে রাতে সে ঘুমাত না, কান্নাকাটি করত। আমাদের সবাইকে ডাকত- আমি কামাল, জামাল, রেহানা- আমরা সবাই তার পাশে বসতাম। গভীর রাত, ১২টা, ১টা, ২টায়। অতটুকু বাচ্চা, সে তো আর বলতে পারত না। কিন্তু তার কষ্টটা আমরা উপলব্ধি করতাম। এভাবে সে বড় হয়েছে।

গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ রাসেলের বিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ শেখ রাসেলের ‘ম্যুরাল’ উন্মোচন করেন এবং ‘শহীদ শেখ রাসেল ভবন’ উদ্বোধন করেন। শহীদ শেখ রাসেলের স্মৃতিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সার্বিক সহযোগিতায় নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ম্যুরালটি। ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে তিনি শহীদ শেখ রাসেলের ওপর নির্মিত এনিমেটেড ডকুমেন্টারি ‘বুবুর দেশ’-এর প্রদর্শনী এবং শেখ রাসেলের জীবনীর ওপর প্রকাশিত বই ‘শেখ রাসেল আমাদের আবেগ’ এবং ‘স্মৃতির পাতায় শেখ রাসেল’ শীর্ষক দুটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ রাসেল শিশু-কিশোর সংসদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে প্রচারিত ‘শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কার্যক্রম সংক্রান্ত ভিডিওচিত্র অবলোকন, এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান এবং দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ল্যাপটপ বিতরণসহ অন্যান্য কার্যক্রমে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটির সঙ্গে একাধারে প্রধানমন্ত্রীর গণভবন, শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণ এবং বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংযুক্ত ছিল।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রান্তে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন পুরস্কার ও বৃত্তি প্রদান করেন। শেখ রাসেল অনলাইন দাবা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার এবং সংগঠনটির সাংগঠনিক কর্মকা-ে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তিনি ল্যাপটপও বিতরণ করেন।

দুর্গাপূজায় মমতাকে উপহার পাঠালেন শেখ হাসিনা : আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা উপহার পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপহারের তালিকায় রয়েছে জামদানি শাড়ি ও সন্দেশ। গতকাল দুপুরে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার সামগ্রী ভারতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশি হাই কমিশনের উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান উপহারটি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় ‘নবান্নতে গিয়ে তাঁর হাতে পৌঁছে দেন।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহসান হাবিব জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিফ প্রটোকল অফিসার আতাউর রহমানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার সামগ্রী বেনাপোলে পাঠানো হয়। উপহার গ্রহণের জন্য পেট্রাপোলে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের প্রথম সচিবের সহকারী আলম হোসেন।

কলকাতা মিশনের উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান গণমাধ্যমকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার তিনি মমতা ব্যানার্জির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে জামদানি শাড়ি ও সন্দেশ ইত্যাদি সামগ্রী পাঠিয়েছেন।