চার বছরে খরচ হয়নি ঋণের টাকা, বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয়

গত ৪ বছরে একটি প্রকল্পে সরকারি খাত থেকে ব্যয় হয়েছে মাত্র ২ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ০ দশমিক ০৮২ শতাংশ। প্রকল্পটিতে ভারতীয় ঋণ সহায়তা ২ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

এ প্রকল্পে ভারতীয় ঋণের কোনো অর্থ ব্যয় করা হয়নি। তবুও হঠাৎ করেই প্রকল্পে ৯২৮ কোটি টাকা বাড়তি আবদার করা হয়েছে।

এমন ঘটনা ঘটেছে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদ্যমান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (১ম সংশোধন) আওতায়। ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকল্পের মেয়াদ এক ধাপে ৫ বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।

সূত্র জানায়, অনুমোদিত ডিপিপিতে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট ক্রয়ের সংস্থান না থাকায় সংশোধিত ডিপিপিতে সংস্থান রাখা হয়েছে। প্রকল্পের পূর্ত কাজ, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি কেনা ও প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হবে। অনুমোদিত ডিপিপিতে পিডব্লিউডি রেট সিডিউল ২০১৪ অনুসারে পূর্ত কাজের প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছিল। বর্তমানে ২০১৮ সালের রেট সিডিউল অনুসারে পূর্ত কাজের প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান, বর্তমানে প্রকাশিত অর্থনৈতিক কোড, ব্যয় ও সিডি ভ্যাট সংশোধন করা হবে। প্রকল্পের অবকাঠামো সমাপ্তি এবং ল্যাব ইকুইপমেন্ট ক্রয় ও স্থাপনের জন্য ২০২৬ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৫ বছর সময় প্রয়োজন বলে দাবি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের। এর পাশাপাশি ৯২৮ কোটি টাকা বাড়তি প্রয়োজন হবে।

প্রকল্পের সাবেক পরিচালক ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রকল্পের মূল কাজ ভারতীয় প্রতিষ্ঠান দেখভাল করছে। প্রকল্পে পূর্ত বা নির্মাণ সামগ্রী ভারত থেকে আনতে ট্যাক্স ফ্রি পাওয়া যাবে। কিন্তু এনবিআর ট্যাক্স ফ্রি দেবে না। ডিপিপিতে ছিল পরামর্শক সেবা খাতে বরাদ্দ রাখার বিষয়ে। তবে পরিকল্পনা কমিশন পরামর্শক সেবা খাত বাদ দিয়ে দিয়েছে। এসব কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঝামেলা তৈরি হয়। বুঝেই হোক না বুঝে হোক পরামর্শক সেবা খাত দেওয়ার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া প্রকল্প পাস হতে কয়েক বছর সময় লাগে। এখন সিডিউল রেট পরিবর্তন হয়েছে। ফলে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি চলাকালে অর্থাৎ ২ বছর পর উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জানায় প্রকল্পের যাবতীয় কার্যক্রম বাস্তবায়নের কাজটি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কমিটির (পিএমসি) মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু অনুমোদিত ডিপিপিতে পিএমসির সংস্থানের বাধ্যবাধকতা না থাকায় প্রকল্পের মূল কাজ আরম্ভ করা সম্ভব হয়নি।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৪১টি জেলায় ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ মোট ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু আছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। ছাত্র-ছাত্রীদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গড়ে তোলা, চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে নতুন ২৪টি ইমার্জিং টেকনোলজি চালু করা; যাতে করে দেশে ও বিদেশে চাকরি বাজারে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনবল তৈরি হয়।

এছাড়া, ২৩টি জেলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ২৩ জেলায় ১টি করে নতুন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের কাজ চলমান আছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য মোট জনসংখ্যার তুলনায় এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত নয়। কারিগরি শিক্ষায় বিভিন্ন দ্বার উন্মুক্ত হওয়ায় এ শিক্ষার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে অংশ নিতে কারিগরি শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ মোট ২ হাজার ৫৬১ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩৭৫ কোটি ৭৪ লাখ এবং ভারতীয় ঋণ সহায়তা ২ হাজার ১৮৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

জুলাই ২০১৭ থেকে জুন, ২০২০ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য মূল প্রকল্পটি ২০১৭ সালে একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছিল। এর পরে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে জুন, ২০২১ পর্যন্ত করা হয়। এ পর্যায়ে উন্নয়ন সহযোগীর সুপারিশ অনুযায়ী প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্টের মাধ্যমে এ প্রকল্পের সকল পূর্ত কাজ সম্পন্নসহ যাবতীয় কাজ বাস্তবায়নের জন্য মোট ৩ হাজার ৪৯০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন বেড়ে ১ হাজার ৯১৬ কোটি এবং ভারতীয় ঋণ সহায়তা ২ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সাল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ৩৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বা ৯২৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল অনুমোদিত প্ৰকল্পে ভারত সরকারের ২৮১ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ২ হাজার ১৮৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা সহায়তা ছিল। বর্তমানে ডলারের এক্সচেঞ্জ রেট পরিবর্তনের কারণে একই পরিমাণ ডলারের বিপরীতে টাকার পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান ৪৯টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের মোট ১১২টি ভবনের অবকাঠামো নির্মাণ / উন্নয়ন করা হবে। এর মধ্যে ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক কাম ওয়ার্কশপ ভবন রয়েছে ২৭টি, ৬ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক কাম ওয়ার্কশপ ভবন নির্মাণ ১টি, ৬ তলা বিশিষ্ট মহিলা হোস্টেল নির্মাণ ৪০টি এবং ঊর্ধ্বমুখী ভবন সম্প্রসারণ রয়েছে ৪৪টি। এছাড়া, ল্যাব ইকুইপমেন্ট ও মেশিন ক্রয়, কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়ন ও উন্নয়ন সহ কতিপয় কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পটি সংশোধন প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্প মেয়াদের ৪ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ পর্যায়ে সংশোধন প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর পিএমসি নিয়োগ করে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে। এ বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়কে আরও বিবেচনায় আনতে বলা হয়েছে। যাতে করে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে সুদূরপ্রসারি সিদ্ধান্ত নিতে পারে।