রাজধানীর পুরান ঢাকা যে কারণে কেমিক্যালমুক্ত হচ্ছে না

প্রায় একযুগেও প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর। কমিঠি গঠন, প্রতিবেদন আর আশ্বাসের ফুলঝুরিতেই সীমাবদ্ধ এসব উদ্যোগ। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলছেন, কেমিক্যাল গোডাউনের লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করেও সরকারের অন্য দফতরের নিষ্ক্রিয়তায় সরানো যাচ্ছে না। আর পরিবেশবাদী আইনজীবীরা বলছেন, গোডাউন সরাতে আদালতের আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

চুড়িহাট্টা-নিমতলি সবশেষ আরমানিটোলার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। কেমিক্যাল গোডাউনের কারণে লাগা এ তিন অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ গেছে প্রায় দুই শতাধিক মানুষের।

প্রতিবারই আগুন লাগার পর পুরান ঢাকাকে কেমিক্যালমুক্ত করার আশ্বাস দেওয়া হয় উপরমহল থেকে। তদন্ত কমিটি গঠন, কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর সুপারিশ হয়। কিন্তু সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি আজও।

ঢাকা দক্ষিণের মেয়র জানান, সরকারি অন্য সংস্থার নিষ্ক্রিয়তার কারণে কেমিক্যালমুক্ত করা যাচ্ছে না পুরান ঢাকাকে।

মেয়র তাপস আরো বলেন, সিটি করপোরেশনের থেকে বাণিজ্য অনুমতি ছাড়াই তারা কীভাবে রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি করে, কীভাবে গুদামজাত করে এবং কীভাবে তারা ব্যবসা পরিচালনা করে চলেছে, সবার চোখের সামনে দিয়ে এগুলো আসলে খুবই অবাক কাণ্ড। দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ যতক্ষণ না এটাকে একটি সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব হিসেবে সময়লব্ধ অনুযায়ী কাজ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত এটা সমস্যা। আর সেটা রয়েই যাবে।

রাসায়নিক গুদাম কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরের ২৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল শিল্প মন্ত্রণালয়। এটা বাস্তবায়নে দফায় দফায় বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু তার কোনো অগ্রগতির তথ্য নেই।

মেয়র আরো বলেন, তালিকা সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সে রকম কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আমরা পাচ্ছি না।

এমন কি মন্ত্রণালয় ও বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে আদালতের দ্বারস্থ হয়েও কোনো লাভ হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সময় এসেছে যারা দায়িত্বপালন করেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার।

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক ডিজি আবু নাঈদ মো. শাহিদ উল্লাহ বলেন, যে কোনো কর্মকর্তা হোন না কেন তার সঠিক দায়িত্ব পালন না করলে অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে।

শাহিদউল্লাহ জানান, লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম ও তদারকির অভাবেই আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠছে কেমিক্যাল গুদাম, ঘটছে দুর্ঘটনা। পরিবেশবিদ আইনজীবী ঠিক একই কথা বলেন।

উল্লেখ্য, পুরান ঢাকায় ২৫ হাজারেরও বেশি ২০০ ধরনের কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। এর মধ্যে অনুমোদিত রয়েছে মাত্র আড়াই হাজার। ২০১০ সালের ৩রা জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে ঘটে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনা। এ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ১১৭ জন মানুষ। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ঘটে আরেক মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এ ঘটনায় প্রাণ হারান ৭৮ জন।