বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রসহ ১৭৫ স্থাপনা উদ্বোধন কাল

মুজিববর্ষ উপলক্ষে কাল রোববার (২৩ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ ১৭৫টি স্থাপনা উদ্বোধন করবেন। এরমধ্যে আরও রয়েছে ৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ৩০টি জেলা ত্রাণ ও গুদাম কাম-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র ও পাঁচটি মুজিব কিল্লা।

এছাড়া ৫০টি মুজিব কিল্লার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী স্থাপনাগুলোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলে শনিবার (২২ মে) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসীন উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দুর্যোগ সহনীয় টেকসই নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পরিকল্পিতভাবে কাঠামোগত ও অকাঠামাগত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

এনামুর রহমান বলেন, উপকূলীয় এলাকায় বয়স্ক, গর্ভবতী, শিশু ও প্রতিবন্ধিতাবান্ধব ৩২০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় দুই লাখ ৫৬ হাজার বিপদাপন্ন মানুষ এবং প্রায় ৪৪ হাজার গবাদিপশুর আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তাদের গবাদিপশুসহ এসব আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় অশ্রয় নিতে পারবেন।

তিনি আরও জানান, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা থেকে মানুষের জানমাল রক্ষার্থে মাটির কিল্লা নির্মাণ করা হয়, যা সর্ব সাধারণের কাছে মুজিব কিল্লা নামে পরিচিত। তারই আধুনিক রূপে উপকূলীয় ও বন্যা উপদ্রুত ১৪৮টি উপজেলায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

উপকূলীয় দুর্গত মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে পারবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাশাপাশি তাদের প্রাণিসম্পদকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারবেন। আর সেগুলো জনসাধারণের খেলার মাঠ, সামাজিক অনুষ্ঠান ও হাট-বাজার হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বন্যাপ্রবণ ও নদীভাঙ্গন এলাকায় দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে বন্যা পীড়িত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য দ্বিতল বিশিষ্ট ২৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হযেছে। এতে প্রায় ৯২ হাজার মানুষ এবং ২৩ হাজার গবাদিপশুর আশ্রয়ের হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৮-২০২২ মেয়াদে ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ চলমান রয়েছে। দুর্যোগকালীন ঘূর্ণিঝড়প্রবণ উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত পানি পরিশোধনে ৩০টি মাউন্টেড স্যালাইন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কারণে এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিপদাপন্নতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সহজ হয়েছে।

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, দুর্যোগে তাৎক্ষণিক সারাদানের অংশ হিসেবে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ করা এবং দুর্যোগের পরপরই প্রাথমিক জরুরি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানো নিশ্চিতে ৬৪টি জেলায় ৬৬টি জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়।

এনামুর রহমান বলেন, ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগে দ্রুত উদ্ধার ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অ্যাকোয়াটিক সি সার্চবোট, মেরিন রেস্কিউ বোট, মেগাফোন সাইরেনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ও যানবাহন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়েছে। এ কার্যক্রম সহজ করার জন্য আরও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলন প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বড় ধরনের দুর্যোগে অনুসন্ধান ও উদ্ধারে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনইওসি) প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।