বান্দরবানের টহল দলের উপর গুলিবর্ষণে নিহত ১ সেনাসদস্য, আহত ২

জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩ ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় মা ও শিশুদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের উদ্দেশে গমনকৃত দলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাসদস্যদের উপর অতর্কিত গুলিবর্ষণ এক সেনাসদস্য নিহত এবং আহত হন আরও দুই সেনাসদস্য।

রবিবার (১২ মার্চ) আনুমানিক বেলা ১টায় কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) এর সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন এবং দুই জন সেনাসদস্য আহত হন। আহত দুই সেনাসদস্য বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন বিগত ৩০ বছর যাবৎ অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠা এবং পেশাদারিত্বের সাথে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার পিতার নাম মৃত শমসের আলী। তিনি রংপুর সদরের ঘাঘটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

দেশ মাতৃকার সেবায় তাঁর এই মৃত্যুতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, এসবিপি (বার), ওএসপি, এনডিইউ, পিএসসি, পিএইচডি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি নামক এই সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলটি ইতোপূর্বে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’ এর মতো একটি জঙ্গী গোষ্ঠীকেও বান্দরবানের পাহাড়ী এলাকায় অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। পাহাড়ী এলাকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য সরকার কর্তৃক নির্মিতব্য বান্দরবানের থানচি সড়ক সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।

সরকারের এই উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে প্রতিহত করার জন্য কেএনএ সন্ত্রাসী দলটি সড়ক নির্মাণ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত অসামরিক ঠিকাদার, মালামাল সরবরাহকারী এবং শ্রমিকদের নিকট থেকে প্রথমে চাঁদা দাবী করে ও পরবর্তীতে কাজ বন্ধ করার হুমকি দেয়। কিন্তু সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই কাজ চলমান থাকায় কেএনএ সন্ত্রাসী দল গত ১১ মার্চ ২০২৩ তারিখে ১২ জন শ্রমিককে অপহরণ করে।

এদের মধ্যে একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয় এবং চার জন শ্রমিককে এখনও কেএনএ জিম্মি করে রেখেছে। অবশিষ্ট সাত জন শ্রমিককে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিলেও তাদেরকে সেনাবাহিনীর সাথে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ না করার জন্য হুমকি প্রদান করে এবং কেএনএ ১২ মার্চ ২০২৩ তারিখে সেনাবাহিনীর টহল দলের উপর গুলিবর্ষণ করে।

উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের তিন উপজেলায় গাড়ি চলাচল বন্ধের জন্য কেএনএ পরিবহন মালিক সমিতিকে হুমকি প্রদান করে নোটিশ জারি করে। কেএনএ সদস্যদের বিবিধ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দ্বারা সৃষ্ট নিরাপত্তাজনিত কারণে গত রবিবার (১২ মার্চ) উক্ত এলাকায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন।

এ ছাড়া, কেএনএ এর নির্যাতনে স্থানীয় বিভিন্ন পাহাড়ী সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী ঘরছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। কেএনএ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি, মাদকের চোরাচালান, অপহরণ ও নৃশংস হত্যাকা-ের কারণে বর্তমান সরকারের বিবিধ উন্নয়নমূলক কর্মকা-, বেসরকারি বিনিয়োগ ও পর্যটন শিল্প বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে, যার সূদুরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। ।

সংবাদ সূত্রঃ আইএসপিআর