সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতীয় গরু, হতাশ খামারিরা

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে একটি বা দুটি নয় পালধরে আসছে অনেক ভারতীয় গরু। অথচ রাজশাহীতে এবার কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত পশুর মজুত আছে। বন্যার কারণে অতিরিক্ত পশুও হাটে উঠছে। কিন্তু ভারতীয় গরুর কারণে ভালো দাম পাচ্ছেন না স্থানীয় খামারিরা।

রাজশাহী আঞ্চলিক প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রাজশাহী অঞ্চলে চলতি বছর কোরবানির চাহিদা রয়েছে ১০ লাখ ৫০ হাজার পশুর। এর বিপরীতে ৩৫ হাজার ছোট বড় খামারে গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ মিলে মজুত আছে ১২ লাখ পশু। চাহিদার চেয়ে প্রায় দেড় লাখ পশু বেশি রয়েছে এখানে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানী ঈদের আগে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলায় ছোট বড় প্রায় ৬৫টি পশুহাট বসে। এর মধ্যে রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠে সিটিহাট সবচেয়ে বড় পশুহাট। এবার রাজশাহী ও আশপাশের এলাকাগুলো থেকে এসব হাটে প্রচুর দেশি গুরু উঠছে। এর পাশাপাশি উঠছে ভারতীয় পশুও।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর এবং ওয়াহেদপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু-মহিষ আসছে। সরকারকে রাজস্ব দিয়ে এসব পশু রাজশাহীসহ আশপাশের হাটগুলোতে উঠছে। এছাড়া রাজশাহীর চর মাজারদিয়াড় সীমান্ত দিয়েও প্রতিদিন বহুসংখ্যক গরু দেশে ঢুকছে। এসব পশুর কারণে দাম নিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

শুক্রবার সকালে রাজশাহী মহানগরীর বসড়ি এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, নৌকায় করে নদী পার হয়ে আসছে ভারতীয় গরু। গরুর রাখালেরা জানান, সীমান্ত পেরিয়ে চর মাজারদিয়াড় খাটালে আসছে গরু। এরপর নদী পার করে গরু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজশাহীর বিভিন্ন হাটে।

রাজশাহীর সিটি হাটে গিয়ে বন্যার প্রভাব দেখা গেছে। উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম এই পশুহাটটিতে প্রচুর সংখ্যক দেশি গরু-মহিষ উঠছে। এর পাশাপাশি দেখা গেছে ভারতীয় গরুও। তবে সব পশুরই দাম কম। বিক্রেতারা বলছেন, বন্যার কারণে এবার এমনিতেই দেশি গরুর দাম কম। তারপরেও ভিনদেশী গরু দাম কমিয়েছে আরও। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

আবদুর রহমান নামে এক গরু বিক্রেতা বলেন, বন্যার কারণে মানুষ বাড়িতে গরু রাখতে পারছেন না। সামনে কোরবানী থাকায় ভালো দাম পাওয়ার আশায় তারা গরু হাটে তুলছেন। কিন্তু হাটে প্রচুর ভারতীয় পশুও উঠছে। এ জন্য দেশি পশুর দাম উঠছে না। তাই হতাশায় ভুগছেন খামারিরা।

হাটে বিক্রির জন্য তিনটি গরু এনেছিলেন জেলার মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ এলাকার কৃষক পাঞ্জাব আলী। তিনি বলেন, বন্যায় তাদের গ্রাম ১০ দিনেরও বেশি সময় ডুবে রয়েছে। বাড়িতে গরু-ছাগল রাখার মতো অবস্থা নেই। মাঠে চরণভূমিও নেই। তাই গরুগুলো হাটে তুলেছেন। কিন্তু ক্রেতারা তেমন দামই দিতে চাইছেন না।

আরেক গরু বিক্রেতা জুলফিকার হোসেন বলেন, বন্যার কারণে বাজারে কারসাজি করে গো-খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে তিন-চার গুণ। এ জন্য তার পাঁচটি গরু তুলেছিলেন তানোরের চৌবাড়িয়া হাটে। সেখানে বিক্রি না হওয়ায় এনেছেন সিটিহাটে। ঈদ ঘনিয়ে আসায় এই পশুহাটটি জমে উঠলেও বিক্রি হচ্ছে না তার গরু।

সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, হাটে দেশি যে গরুর দাম ৫০ হাজার টাকা, সে রকম আকারের ভারতীয় গরু পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকায়। তাই ক্রেতাদের দেশি গরুর প্রতি ঝোঁক থাকলেও অনেকেই কিনছেন ভারতীয় গরু। গতবার ঈদের মাত্র দুয়েক দিন আগে ভারতীয় গরু এলেও এবার একটু আগে আগেই আসছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ২৬ আগস্ট ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ