রোজার আগেই পেঁয়াজ-চিনি রপ্তানির অনুমতি দেবে ভারত: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

প্রতিবেশি দেশ ভারত রোজার আগেই পেঁয়াজ ও চিনি রপ্তানির অনুমতি দেবে বলে কথা দিয়েছে, এমনটায় জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

আজ রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি এ সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরেও এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। ভারত ও অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ, চিনি সরবরাহ যথাযথ রাখতে ব্যবস্থা নেবো।\’

তিনি বলেন, \’ভোক্তারা যাতে ন্যায্যমূল্যে সব ধরনের ভোগ্যপণ্য কিনতে পারেন সেজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দ্রুত পণ্যসামগ্রী আমদানি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিনি, ভোজ্যতেল, খেজুর ও চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। আশা করছি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দ্রুত এসব পণ্যের শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।\’

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, \’রমজানের সময় বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকবে এবং মানুষ কমদামে পণ্য কিনতে পারবেন।\’

এর আগে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, \’আমরা ভারতের সঙ্গে কথা বলেছি। দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাদের নিষেধাজ্ঞা ছিল, চিনি ও পেঁয়াজ কোনো পার্শ্ববর্তী দেশকে দেবে না, সেখানে তারা একটু শিথিল করেছে। তারা আমাদের আবেদনটা সহানুভূতি নিয়ে দেখছে। আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি।\’

তিনি বলেন, \’আশা করছি, রমজানের আগেই আমরা একটা ইতিবাচক সাড়া পাবো। সেই চিনি ও পেঁয়াজ সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা হবে।\’

আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, \’২০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ এবং ৫০ হাজার টন চিনি ভারত দিতে পারবে বলে জানিয়েছে। আমরা বলেছি, আমাদের আরেকটু চাহিদা বেশি। আমরা ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ এবং এক লাখ টন চিনি চেয়েছি। তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন। সামনে তাদের নির্বাচন, ভোক্তাদের কষ্ট দিয়ে তো আমাদের দেবে না। যতটুকু সহনীয়, ততটুকু তারা দেবে।\’

পেঁয়াজ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, \’বাজারে এই মুহূর্তে মুড়িকাটা পেঁয়াজগুলো আছে। মূল পেঁয়াজটা উঠতে মাসখানেক লাগবে। পুরোপুরি ফসল তোলা শেষ হবে এপ্রিলের মাঝামাঝিতে। আমরাও উদ্যোগ নিয়েছি, টিসিবির মাধ্যমে যেন বাইরে থেকে পেঁয়াজ এনে বিক্রি করতে পারি। গত ২২ জানুয়ারি এনবিআরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সেখানে রমজান উপলক্ষে চিনির যে ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে, সেটা কমানোর প্রস্তাব করা হয়।\’

আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, \’নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সারা দেশে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের ‘১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) ছয় মাসে পাঁচ হাজার ৩৭৪টি বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ সময় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনে বিভিন্ন অপরাধে ১১ হাজার ৬৮৫টি প্রতিষ্ঠানকে ছয় কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।\’

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, \’চালের দাম স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় চালের মিল ও পাইকারি বাজার মনিটরিং করছে। আলু, পেঁয়াজ ও ডিম সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি নিশ্চিতকরার জন্য দেশব্যাপী কোল্ড স্টোরেজ, পাইকারি ও খুচরা বাজারে তদারকির কাজ পরিচালনা করছে। এসব পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অধিদপ্তর দেশব্যাপী পাইকারি ও খুচরা বাজারে মনিটরিং করছে। এ ছাড়া কাঁচা মরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক ও অভিযান পরিচালনাসহ নিয়মিত বাজার মনিটরিং হচ্ছে।\’

প্রতিমন্ত্রী জানান, \’মাংসের দাম কমানোর জন্য ভোক্তাদের ক্রয়সীমার মধ্যে আনার জন্য বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসহ অংশীজনের অংশগ্রহণে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার মনিটরিং পরিচালনা করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের ইতিবাচক রিপোর্টের মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখার জন্য কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া ভোজ্য তেল, চিনি, এলপি গ্যাস, গরম মসলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী নিয়মিত বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখা হয়েছে।\’

Scroll to Top