হামিদ-এরদোগান বৈঠক, আলোচনায় রোহিঙ্গা ‘সেইফ জোন’

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের মিয়ানমার অংশে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি ‘সেইফ জোনে’ থাকতে পারে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় রাষ্ট্রপতি হামিদ এ আহ্বান জানান। আস্তানার প্যালেস অব ইনডিপেনডেনসে ওআইসির প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্মেলনের মাঝে দুই রাষ্ট্র প্রধান বৈঠকে বসেন।

বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমার সীমানার অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সেইফ জোনে থাকতে পারে সে উদ্যোগ নিতে ওআইসিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।’

শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রসের (আইসিআরসি) মাধ্যমে সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারকে ‘সেইফ জোন’ প্রতিষ্ঠার ওই প্রস্তাব দেওয়া হয়।

তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে আবদুল হামিদ বলেন, ‘গত ২৫ অগাস্টের পর থেকে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। তাদের আসা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের সাময়িক আশ্রয় দিচ্ছে।’

কিন্তু ‘অতি জনবহুল’ দেশ বাংলাদেশের জন্য এই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যে একটি বড় সমস্যা, সে কথাও রাষ্ট্রপতি তুলে ধরেন। প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের একটি জায়গায় আশ্রয় দেওয়ার জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজছে বলে বৈঠকে জানান রাষ্ট্রপতি।

রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে মর্যাদা ও নিরাপত্তার সাথে বাস করতে পারে সে ব্যাপারে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগের জন্য ওআইসিসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থাকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য ফোন করায় এবং তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে বাংলাদেশ সফর করায় বৈঠকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি হামিদ।

ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলো রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার স্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে সহযোগতিার জন্য বৈঠকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘তুরস্ক সবসময় রোহিঙ্গা জনগণের পাশে আছে। ইতোমেধ্য এক হাজার টন খাদ্য সহায়তা পাঠানো হয়েছে। আরও দশ হাজার টন ত্রাণ পাঠানো হবে।’ বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও সংস্থা যাতে বাংলাদেশের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠায় সে উদ্যোগ নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।

পররাষ্ট্র সচিব (দ্বিপাক্ষিক) কামরুল আহসান, কাজাখস্তানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসুদ মান্নান, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সরোয়ার হোসেন, প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, ১০ সেপ্টেম্বর  ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস