রাব্বানীর ধান কাটার সেই ছবি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড়

এবার ধানের দাম অন্যান্যবারের থেকে তুলনামুলক ভাবে অনেক কম। দাম কম আর শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় মাঠ থেকে পাকা ধান ঘরে তুলছেন না কৃষকরা। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কৃষকদের ধান কাটাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করতে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের আহ্বান জানানো হয়।

এর পর দেখা যায়, গতকাল বুধবার রাজধানীর অদূরে আমিনবাজার এলাকায় নিজেই ধান কাটতে নেমে গেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তার নেতৃত্বে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধান কাটেন।

গতকাল সেই ধানকাটার দৃশ্য গোলাম রাব্বানী নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আপলোড করেন। ইতিমধ্যে সেই ছবি ভাইরাল হয়েছে।

এখন পর্যন্ত ছবিতে মন্তব্য জমা পড়েছে তিন হাজারের কাছাকাছি। শেয়ার হয়েছে পাঁচ শতাধিক।

মন্তব্যের ঘরে গোলাম রাব্বানীসহ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভূয়সী প্রশংসা জমা পড়েছে।

সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া লিখেছেন, ‘দরিদ্র কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্নেহের ছাত্রনেতা ইতিবাচক ছাত্ররাজনীতির প্রমিথিউস গোলাম রাব্বানী ভাই।’

আরিফ মাহমুদ লিখেছেন, ‘তৃণমূলের দ্বারপ্রান্তে এসে কৃষকের মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ববোধ আপনাকে দেখে আরো জাগ্রত হবে সোনার বাংলাদেশ আমার।’

ফয়সাল কবির লিখেছেন, ‘অসহায় কৃষকের পাশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।’

অনেকেই লিখেছেন, ‘কৃষক বাঁচলে, বাঁচবে দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।’

একজন লিখেছেন, ‘সুট বুট পরা ছাত্রলীগের বেহাল দশা আজ কাটিয়ে উঠেছে, আজ বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগের প্রতিফলন হয়েছে।’

তবে শুধু প্রশংসাই নয়, সমালোচনামূলক ও নেতিবাচক মন্তব্যও পড়েছে বেশ কিছু।

কৃষক বেশে গোলাম রাব্বানীর সেই ছবির মন্তব্যের ঘরে মীর মামুন অর রশীদ লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগ কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছে। ধন্যবাদ। তবে ছাত্রলীগের উচিত ধান কেটে নয়, জেলায় জেলায় কৃষকের কাছে থেকে সরাসরি প্রশাসনকে ধান ক্রয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা।’

মো. তানভীর লিখেছেন, ‘প্রিন্ট করা টিশার্ট আর কায়দা করে সাদা লুঙ্গি পরে কোমরে গামছা বেঁধে আপনি কোনো কৃষকের উপকার করতে যাননি। এটি ফটোসেশন আর লোক দেখানো কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়।’

অন্য একজন লিখেছেন, ‘ধান কাটতে নেমে এত সাদা, পরিষ্কার কাপড় হয় কি করে? ’

তাওহীদুল আলম লিখেছেন, সেন্ডেল পরে ছবি তোলার মুডে এক বিঘা জমির, এককোনা ধান কেটে ফেসবুক লাইভে, প্রোফাইল পিক, কভার পিক দিলেই সারা দেশের ধান কাটা হয়ে গেল না রে… ভাই! ’

এটিএম মুস্তফা লিখেছেন, ‘সব কাজ সবাই কে দিয়ে হয় না। আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে মনে করি, এটা শুধু মিডিয়ায় আলোচিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। কেউ এখন বোকা নয়।’

রবিউল ইসলাম লিখেছেন, ‘আপনাকে ধন্যবাদ ভাই। তবে এতে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। আমরা কৃষকের সন্তান, তাই কৃষকের কষ্টটা বুঝি। এ রকম হাজারো কৃষক আছেন, যাদের ধান কেটে দিলেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তাই কৃষকের জন্য কিছু করতে হলে ধানের দাম বাড়ানোর আবেদন করুন। ’

ইয়াসিন মাহমুল লিখেছেন, ‘কৃষক চেয়েছে ধানের ন্যায্যমূল্য আর আপনারা কেটে দিলেন ধান! কী অসম্ভব এক নতুন সুন্দর বই লিখলেন ভাই ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করে রাখা উচিত। সেই সাথে গ্রিনিজ বুকে নাম লেখানোর জোরালো দাবি জানাচ্ছি। কৃষকের কষ্ট আর ইমোশন নিয়ে ড্রামা করা সহজ; কিন্তু অনুভব করা কঠিন। এই ছবি তোলার পর কতক্ষণ ধান কেটেছেন আপনি? ’

প্রসঙ্গত এবার বোরো ধান আবাদ করে উৎপাদন খরচ উঠছে না বলে সারা দেশে কৃষকদের বিক্ষোভ চলছে। ধানের দাম নিয়ে অসন্তোষ হয়ে নিজের পাকা ধানের ক্ষেতে কৃষকের আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এমন পরিস্থিতিতে কৃষকদের বাঁচাতে অর্থমন্ত্রী চাল আমদানি সীমিত করার কথা বলেছেন।

অন্যদিকে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হওয়ায় চাল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ রাখতে সুপারিশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

Scroll to Top