সন্ধ্যায় খালেদা জিয়া বাসায় ফিরছেন

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা চিকিৎসকরা মন্দের ভালো বলছেন। কয়েকদিন ধরে তার রক্তক্ষরণও বন্ধ। সর্বশেষ গতকাল সোমবারের ওবিটিসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফলও চিকিৎসকরা বলেছেন সন্তোষজনক। এই অবস্থায় চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড চলমান করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে খালেদা জিয়াকে বাসায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান। তিনি জানান, আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বাসায় আসবেন।

এ উপলক্ষ্যে এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গঠিত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড ১১তলায় হাসপাতাল অডিটোরিয়ামে সন্ধ্যা ৬টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান শায়রুল কবির খান।

এর আগে সকালের দিকে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আগের মতোই আছেন। এখন কিছুটা স্থিতিশীল বলা যায়। সে সময় বাসায় নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি তিনি।

তবে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলে খালেদা জিয়া আজ বাসায় ফিরবেন। এজন্য বাসায় সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

দলীয় নেতা ও চিকিৎসক সূত্রে জানা যায়, বিদ্যমান অবস্থায় দেশে এর চেয়ে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো সম্ভব নয়। হঠাৎ করেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে বেশ চিন্তিত চিকিৎসকরা। তারা এ-ও মনে করেন, এ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হতে পারে- এ কারণে খালেদা জিয়া ভাড়া বাসা ফিরোজায় কর্মরত নিরাপত্তাকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার করোনা টেস্ট করা হয়েছে।

চিকিৎসকরা জানান, খালেদা জিয়া নিজেও এখন আর হাসপাতালে থাকতে চাইছেন না। এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রায় আড়াই মাস ধরে রয়েছেন। চিকিৎসকরাও মনে করছেন, বাসায় পারিবারিক পরিবেশে রাখতে পারলে খালেদা জিয়া শারীরিক ও মানিসকভাবে আরও শক্ত হতে পারবেন। আত্মীয়-পরিবারের মধ্যে তিনি সেবার মানটা ভালো পাবেন।

অন্যদিকে হাসপাতালে প্রতিনিয়ত করোনা রোগীর আগমন ঘটছে। এতে খালেদা জিয়াও আক্রান্ত হতে পারেন। এর আগেরবার তিনি হাসপাতালে থেকে দ্বিতীয়বার করোনাক্রান্ত হয়েছিলেন। একদিকে এই ভয়ের পাশাপাশি তার লিভার সিরোসিস রোগের ভয়ঙ্কর দিকটাও ভাবিয়ে তুলছে চিকিৎসকদের।

লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়াকে গত ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এভারকেয়ারের চিকিৎসক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি বিশেষ মেডিক্যাল টিম তার চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। ৭৭ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস ছাড়াও অনেক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার একটু উন্নতি হওয়ায় গত ৯ জানুয়ারি তাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকেই তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে যেতে চাচ্ছেন। কিন্তু এর মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি তার গৃহকর্মী ফাতেমা করোনায় আক্রান্ত হয়। বর্তমানে তার করোনা টেস্ট নেগেটিভ এসেছে।

Scroll to Top