সৈয়দ আশরাফের জায়গা নেবে কে? মেয়ে নাকি অন্য কেউ?

রাজনীতির সফেদ পুরুষ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। গত ৩ জানুয়ারি তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বরাবরের মতো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু, শপথের দিনেই তার মৃত্যু হয়।

এরপর সৈয়দ আশরাফের কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসন শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি উপ-নির্বাচনের তফসিল দিয়েছে।

সৈয়দ আশরাফ তার আসনে স্বচ্ছ, সহনশীল ও গঠনমূলক রাজনীতির পুরোধা হিসেবে পরিচিত। এজন্য তফসিলের পর থেকেই আলোচনা— তার অভাব পূরণে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে এবার কে? কেমন হবে এই আসনের রাজনীতি? শান্তির বাতাস আগের মতোই বইবে? নাকি সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে পাল্টে যাবে সব?

এমন জল্পনা-কল্পনা শুধু কিশোরগঞ্জে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গণেও। আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থীদের ২৩-২৫ জানুয়ারির মধ্যে মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিতে বলেছে।

অবশ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে তার ভাই সৈয়দ শাফায়াত ইসলাম, কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ূন ও বর্তমান রাষ্ট্রপতির ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন। তবে, দল শেষ পর্যন্ত অসুস্থ থাকলেও সৈয়দ আশরাফকেই বেছে নেন।

মনোনয়ন সংগ্রহ করেই মশিউর রহমান হুমায়ূন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জবাসীর আবেগ। তিনি নির্বাচন করলে আমরা সবাই তার হয়ে যাব।’

বাস্তবেও হয়েছে তাই। সবাই মিলেই সৈয়দ আশরাফকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেন। তবে, তার অবর্তমানে উপ-নির্বাচনে শাফায়াত, হুমায়ূন ও তুহিন তিনজনই মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

তবে এবার নতুন করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে যুক্ত হবেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন ডা. সৈয়দ জাকিয়া নূর লিপি। লন্ডনে দীর্ঘ চিকিৎসক জীবনের ইতি টেনে সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। দলের হাই-কমান্ডের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, নিজের ইচ্ছে বা আগ্রহ না থাকলেও সৈয়দ আশরাফের রক্তের একমাত্র উত্তরাধিকার রীমা ইসলামকে চাইছেন কিশোরগঞ্জসহ দেশবাসী। অপরিচিত রীমা হুট করেই বাবার কফিন ধরে আবির্ভূত হন। তার কান্নামাখা চাহনি আলাদা আবেগ তৈরি করে। এই একটি মাত্র ছবি এবং চাহনিই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

এরপর থেকে আশরাফভক্তরা রীমাকে সংসদ নির্বাচনে রাখার জন্য নিজেদের মতামত ব্যক্ত করছেন। যদিও সৈয়দ আশরাফের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দ রীমা ইসলাম রাজনীতিতে আসছেন না। তিনি লন্ডনে এইচএসবিসি ব্যাংকে চাকরি করেন, সেখানেই থাকবেন।

সৈয়দ আশরাফের আসনে নৌকার কাণ্ডারি কে— এমন প্রশ্নে দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘এখনও এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি। মনোনয়ন বোর্ডে সবার প্রোফাইল উঠবে, সেখানে আলোচনা করে নেত্রীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।’

দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিশোরগঞ্জ-১ আসনে সৈয়দ নজরুল ইসলামের রক্তের উত্তরাধিকার রাখার পক্ষেই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।

সে হিসেবে, সৈয়দ শাফায়াত ইসলাম বা ডা. সৈয়দ জাকিয়া নূরই হচ্ছেন কিশোরগঞ্জ-১ আসনে রাজনীতির আগামী অভিভাবক।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাধীনতা যুদ্ধে গঠিত মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্য তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে আশরাফুলের বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়।

বাবা নিহতের ঘটনায় পরে সৈয়দ আশরাফ যুক্তরাজ্যে চলে যান। দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে থাকা আশরাফ দেশে ফিরে ১৯৯৬ সালে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি।

সেনাসমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে, ২০০৭ সালে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের পর সৈয়দ আশরাফ দলের সাধারণ সম্পাদক হন। তবে ২০১৬ সালে দলের সম্মেলনে এই পদ ছেড়ে দেন তিনি।

২০০৯ সাল থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন সৈয়দ আশরাফ। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নিজের অধীনে রাখা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তাকে দেন।

ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দ আশরাফ ব্রিটিশ ভারতীয় শীলা ঠাকুরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। শীলা লন্ডনে শিক্ষকতা করতেন। ২০১৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Scroll to Top