শেষ সুযোগ রয়েছে আর্জেন্টিনার

একেবারে অকল্পনীয়। মেসি নেই, আর্জেন্টিনাও নেই বিশ্বকাপে! তবে এমন ছবিও আর পরাবাস্তব নয়, সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ১৯৭০ সালের পর আর কখনই বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েনি আর্জেন্টিনা, মানে দেশটির কয়েক প্রজন্মের জানা নেই বিশ্বকাপে স্রেফ দর্শক হয়ে বসে থাকার যন্ত্রণা কতটা। আগামীকাল ভোরে ইকুয়েডরের সঙ্গে হেরে গেলে হতে পারে তেতো সেই অভিজ্ঞতা। লিওনেল মেসিদের জন্য ম্যাচটি তাই বাঁচা-মরার। একই রকম রোমাঞ্চ পেরু-কলম্বিয়া, ব্রাজিল-চিলি, প্যারাগুয়ে-ভেনিজুয়েলা, উরুগুয়ে-বলিভিয়া ম্যাচ ঘিরেও। কারণ লাতিন অঞ্চলে ব্রাজিল ছাড়া বিশ্বকাপের টিকিট পায়নি আর কেউ। তাই সব উত্তেজনা, নাটক আর চমক জমা শেষ দিনের জন্য।

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ অভিযানের শুরু ইকুয়েডরের বিপক্ষে। হোঁচট প্রথম ম্যাচেই, নিজেদের মাটিতে হারতে হয় ২-০ গোলে। শেষ ম্যাচেও প্রতিপক্ষ সেই ইকুয়েডর।

মাঝখানের দুই বছরে শুধু তলানিতে নেমেছে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। কোচ বদলেছে তিনজন। কিন্তু তাতা মার্তিনো, এদগার্দো বাউসার পর হোর্হে সাম্পাওলি দায়িত্ব নিয়েও বদলাতে পারেননি ভাগ্য। ১৭ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে ছয় নম্বরে আর্জেন্টিনা। সরাসরি বিশ্বকাপে যেতে আজ জিততেই হবে ইকুয়েডরের বিপক্ষে। নইলে ৪৭ বছর পর দর্শক হতে হবে বিশ্বকাপের। সেটা চান না বলে পেরুর বিপক্ষে ড্রর পর হোর্হে সাম্পাওলি জানিয়েছিলেন, ‘আমরা বিশ্বকাপে খেলবই।’

পরিসংখ্যান অবশ্য সাহস জোগাচ্ছে না আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। কারণ শেষ চার ম্যাচে জয়ের স্বাদ পায়নি তারা। ইকুয়েডরের বিপক্ষে কুইটোয় জয় পায়নি টানা ১৬ বছর। ২০০৫ ও ২০০৯ সালে হারের পর ২০১৩ সালে ড্র করেছিল ১-১ গোলে। তা ছাড়া কুইটোয় খেলতে হবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার ফুট উচ্চতায়। বলিভিয়ার বিপক্ষে দম বন্ধ করা এ ধরনের উচ্চতায় কদিন আগে নেইমার, কৌতিনিয়োরা অক্সিজেন মাস্ক পরেছিলেন ড্রেসিংরুমে। মেসিও এখানে খেলতে এসে করেছেন বমি। এসব পেছনে ফেলে আজ কি মেসি, দিবালারা পারবেন নিজেদের উজাড় করে খেলতে?

তাঁদের আশা জাগাতে পারে এবারের বিশ্বকাপ অভিযানে ইকুয়েডরের মাটিতে ব্রাজিলের ৩-০, পেরুর ২-১ আর কলম্বিয়ার ২-০ গোলের জয়। তা ছাড়া টানা পাঁচ ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ায় কোচ বদলে আর্জেন্টাইন হোর্হে সেলেসিওকে দায়িত্ব দিয়েছে তারা। ইকুয়েডরের জন্য গুরুত্বহীন বলে সিনিয়র কয়েকজনকে বাদ দিয়ে নিজেদের দেশের লিগে খেলা প্রতিভাবানদের নিয়ে আজ একাদশ সাজাবেন সেলেসিও। তবে এটা যে আর্জেন্টিনাকে ছাড় দেওয়া নয় স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি, ‘আক্রমণাত্মক ফুটবলে সবাই জয় দেখতে আসবেন আমাদের। দর্শকদের হতাশ করতে পারি না। ’

লিওনেল মেসি, সের্হিয়ো আগুয়েরো, গনসালো হিগুয়াইন, পাউলো দিবালাদের মতো তারকাদের নিয়ে ১৭ ম্যাচে মাত্র ১৬ গোল করেছে আর্জেন্টিনা। তাই পেরুর বিপক্ষে দিবালাকে বসিয়ে দারিও বেনেদেত্তোকে নিয়ে বাজি খেলেছিলেন হোর্হে সাম্পাওলি। সেটাও কাজে আসেনি। ২০১০ গ্রুপ পর্বে শেষ খেলার আগের ম্যাচে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল পেরু। অন্তিম মুহূর্তে গোল করে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপে নিয়ে গিয়েছিলেন ১০ বছর পর জাতীয় দলে ফেরা মার্তিন পালেরমো। আকাশি-নীলদের তৎকালীন কোচ ডিয়েগো ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ‘এ হচ্ছে সাধু পালেরমোর আশীর্বাদ!’ আজ এমন কারো আশীর্বাদই লাগবে আর্জেন্টিনার।

ব্রাজিল বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে নিজেদের মাটিতে হারেনি কখনো। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে ছিটকে দিতে আজ সাও পাওলোয় চিলির বিপক্ষে ইচ্ছে করে হারার গুঞ্জন খোদ ব্রাজিলিয়ান মিডিয়ায়! এ নিয়ে বিরক্তিই জানালেন চিলির গোলরক্ষক ক্লওদিও ব্রাভো, ‘আক্রমণ না করার ব্যাপারে কোনো চুক্তি করেনি ব্রাজিল। ওরা আমাদের কোনো উপহার দেবে না। ব্রাজিলকে হারানোর মতো ভালো খেলোয়াড় ও একটা দল আছে আমাদের। ’

১৯৮২ সালের পর বিশ্বকাপ খেলা হয়নি পেরুর। আজ কলম্বিয়াকে হারাতে পারলে রাশিয়ার টিকিট পেতে পারে তারা। তা ছাড়া বিশ্বকাপ অভিযানে একেবারে প্রথম ম্যাচে কলম্বিয়ার সঙ্গে ২-০ গোলে হেরেছিল পেরু। নিজেদের মাটিতে সেই প্রতিশোধ নেওয়ারও সুযোগ তাদের। পারবে কি পেরু? ২৮ পয়েন্ট নিয়ে অন্তত প্লে-অফ নিশ্চিত করে ফেলেছে উরুগুয়ে।

এরই মধ্যে বাদ পড়া বলিভিয়ার বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে জিতলে দ্বিতীয় হয়ে রাশিয়ার টিকিট পাবে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এ জন্য নিজেদের বদলে বরং লিওনেল মেসিদের নিয়ে বেশি দুর্ভাবনা উরুগুয়ের কোচ অস্কার তাবারেজের, ‘বাছাই পর্বে আর্জেন্টিনা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বকাপে গেলে অন্যতম ফেভারিট থাকবে ওরা। মেসি অনেক বড় মাপের খেলোয়াড় হলেও একা ওর পক্ষে সব কিছু করা সম্ভব নয়। বিশ্বকাপে না গেলে মেসির ক্যারিয়ার কলঙ্কিত হবে বলেও মনে করি না আমি। ’ সূত্রঃ এএফপি, মার্কা

বাংলাদেশ সময় : ১৩১০ ঘণ্টা, ১০ অক্টোবর,  ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/ডিএ