প্রাণঘাতী করোনায় লড়ছে সিরিয়া, তেল চুরিতে ব্যস্ত আমেরিকা!

মহামারী করোনাভাইরাস বিশ্বের ২০৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অপরদিকে মারা গেছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৪ জন।

এদিকে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যস্ত সিরিয়া। এই সুযোগে দেশটি থেকে জ্বালানি তেল চুরি করছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আমেরিকার আঞ্চলিক মিত্ররা। করোনার ভয়াবহ দুর্যোগের মাঝে আমেরিকার বিরুদ্ধে এমন ভয়ানক অভিযোগ তুলেছেন সিরিয়ার এক সাংবাদিক।

আরবি ভাষী সংবাদপত্র রাই আল-ইয়োমে প্রকাশিত মতামতমূলক নিবন্ধে এ কথা তুলে ধরেছেন প্রবীণ সাংবাদিক আবদেল বারি আতওয়ান। তেল চোরাচালানে সহায়তাকারী স্থানীয়রা শেষ পর্যন্ত কামানের খোরাকে পরিণত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ফোরাত নদীর পূর্বাঞ্চলে সিরীয় তেল ক্ষেত্রগুলার ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলা। তাদের সঙ্গে এ অপতৎপরতা যোগ দিয়েছে আমেরিকার স্থানীয় মিত্ররাও।

তিনি আরও জানান, সিরিয়ার আল-হাসাকাহ্ থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, কুর্দিস সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স বা কুর্দি সিরীয় গণতান্ত্রিক বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যদের নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে প্রচারণা শুরু করেছে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। এ বাহিনী সিরিয়ার তেল ক্ষেত্রগুলোকে তাদের ভাষায় পাহারা দেবে। পাশাপাশি এই অঞ্চলে ইউএস-এসডিএফের তেল চোরাচালান কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয় সে পদক্ষেপও নেবে। বিনিময়ে এ বাহিনীর সদস্যদের মাথাপিছু সাড়ে ৩০০ ডলার সমপরিমাণ বেতন দেয়া হবে।

তেল চোরাচালান তৎপরতার লাভের অংকের ভাগ প্রধানত পাবে ইরাকের কুর্দি শাসিত অঞ্চল, ঠিকাদার গোষ্ঠী এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েলের কিছু কোম্পানি।

আতওয়ান মনে করিয়ে দেন যে, সিরিয়ার তেল ও গ্যাসের কূপগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার বিষয়টি নির্লজ্জ ভাবেই প্রকাশ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ‌এই তেল ক্ষেত্রগুলো যেন দায়েশ বা আইএস গোষ্ঠীর হাতে বা দামেস্ক সরকারের হাতে না পড়ে সেটা নিশ্চিত করতেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সিরিয়া সরকার এ সব তেল-ক্ষেত্রের বৈধ মালিক হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে বঞ্চিত রাখতে আদা-জল খেয়েই নেমেছেন ট্রাম্প ও তার প্রশাসন।

কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলীয় সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটি আত তানফ থেকে কয়েক ডজন সশস্ত্র সদস্য পক্ষত্যাগ করেছেন। আতওয়ান ধারণা করেন এর মধ্য দিয়ে আমেরিকার জন্য ভবিষ্যতে কী ফল দাঁড়াবে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইরানের কুদস বাহিনীর সাবেক প্রধান কাসিম সোলাইমানি এবং ইরাকের জনপ্রিয় হাশদ আশ-শাবির উপ প্রধান আবু মাহদিকে হত্যার পর গোটা অঞ্চলে মার্কিনবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে পৌঁছেছে। এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ইরাকি সংসদ সর্বসম্মত ভাবে সে দেশ থেকে মার্কিন ঘাঁটি সরিয়ে নেয়ার বিল পাস করেছে।

আর এ প্রেক্ষাপটে আতওয়ান বলেন, মার্কিন বাহিনী পরিশেষে এ অঞ্চল থেকে ভেগে যেতে বাধ্য হবে। বাগদাদের উত্তরে কিরকুক বা কে ১ এবং আত-তাজি ঘাঁটি থেকে যে ভাবে ভেগেছে একই ভাবে অবশেষে এই অঞ্চল ছেড়েও মার্কিনীদের পালিয়ে যেতে হবে। আর ফোরাত নদীর পূর্বাঞ্চলে সিরীয় তেল কূপগুলোর ওপর অবশ্যম্ভাবীভাবে প্রতিষ্ঠা হবে দামেস্কের কর্তৃত্ব।

তেল চোরাচালানে সহায়তাকারী কোনো কুর্দি গোষ্ঠীর কপালে কী জুটবেও সে কথা ব্যক্ত করেন খ্যাতনামা এ সাংবাদিক।

তিনি বলেন, এটি সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক মার্কিন সমর্থনের ওপর ভরসা করে কিছু কুর্দি গোষ্ঠী সিরিয়ার তেল চোরদের ভাড়াটে বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তারা অতীত থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি। তেল চুরির মার্কিন নিল নকশায় অংশ নিয়ে শেষ পর্যন্ত তারা কামানের গোলার খোরাকে পরিণত হবে।
:পার্সটুডে