করোনা: ভারতে হঠাৎ কেন ট্রেন্ড করছে, ‘আজান কিছুতেই বন্ধ হবে না’?

মহামারী করোনাভাইরাসে যে বদলে যাচ্ছে বিশ্বের স্বাভাবিক পরিস্থিতি। ভারতে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পুলিশ সেখানে অনেকগুলো জেলায় মসজিদে আজান বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার পর মুসলিম সমাজের নেতা ও অ্যাক্টিভিস্টরা তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

এর জেরে রমজান মাসের শুরুতেই ভারতের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এখন অন্যতম টপ ট্রেন্ডিং হয়ে উঠেছে হ্যাশট্যাগ ‘আজানবন্ধনেহিহোগা’ – অর্থাৎ আজান কিছুতেই বন্ধ হবে না।

এর দুদিন আগে দিল্লিতেও কোনও কোনও এলাকায় পুলিশ আজান বন্ধ করার মৌখিক নির্দেশ দিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। ভারতে রমজান মাস শুরু হওয়ার ঠিক আগের দিন বিকালে উত্তর-পশ্চিম দিল্লিতে একটি মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে পুলিশ কর্মীরা জানায়, এখন থেকে মসজিদে লাউডস্পিকারে আজান দেওয়াও বন্ধ রাখতে হবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা তাতে তুমুল আপত্তি জানান, কিন্তু পুলিশ কর্মীরাও ছিলেন নাছোড়বান্দা। সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ ছড়িয়ে পড়লে দেখা যায়, মুসলিম নারীরা পুলিশকর্মীদের বলছেন, “রমজান মাসে ঠিকমতো আজান না-হলে আমরা রোজা খুলব কীভাবে?”

“আর আজান দেওয়া হলে লকডাউনের কোন নিয়মই বা ভাঙা হবে?” ওই পুলিশকর্মীরা অবশ্য বারবারই বলতে থাকেন – এটা দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের নির্দেশ, চাইলে তারা থানায় গিয়ে নির্দেশের প্রতিলিপি দেখে আসতে পারেন।

এই ভিডিও নিয়ে তুমুল হইচই শুরু হলে দিল্লি সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ শিশোদিয়া জানিয়ে দেন, শহরের কোনও মসজিদেই আজান বন্ধ হবে না।

কিন্তু এর মধ্যেই নতুন করে অভিযোগ উঠেছে, রমজান মাস শুরু হতে না-হতেই উত্তরপ্রদেশে কনৌজ, ফারুকাবাদ, এটাওয়া, গাজীপুর-সহ বিভিন্ন জেলায় পুলিশ জোর করে মসজিদে আজান বন্ধ করে দিচ্ছে।

জেএনইউ’র ছাত্র নেত্রী ও এলাহাবাদের মেয়ে আফরিন ফাতিমা এখন ওই রাজ্যেই ত্রাণের কাজে ব্যস্ত। তিনি বলেন, “পুলিশ এই জেলাগুলোতে গিয়ে মসজিদের লাউডস্পিকার বন্ধ করে দিচ্ছে – যাতে দিনের কোনও সময়ই আজান দেওয়া না-যায়।”

“আমরা তো সবাই মিলেই মহামারির বিরুদ্ধে লড়ছি, মসজিদে একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি কখনও জড়োও হচ্ছে না।” “আর যেখানে আজান দিতে একজন মুয়াজ্জিনই যথেষ্ট– তখন এটা বোধগম্য নয় যে আজান দিলে কীভাবে লকডাউন ভাঙা হয়?”

“ফলে আমরা মনে করছি এটা মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোরই আর একটা রাস্তা!”

এর জেরেই রবিবার সকালে ভারতে টুইটারে প্রধান ট্রেন্ডিং ইস্যু ছিল হ্যাশট্যাগ আজানবন্ধনেহিহোগা।

এটি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পোস্ট করেছেন বিহারের রাজনীতিবিদ আখতারুল ইমান, সমাজকর্মী শার্জিল উসমানি বা শামিল আতিফের মতো অনেকেই।

আফরিন ফাতিমা আরও বলছিলেন, “উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ প্রথমে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী বিক্ষোভ দমনের নামে মুসলিমদের ওপর অত‍্যাচার শুরু করে।”

“তারপর তাবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে এবং এখন আজান বন্ধ করে তারা আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারই কেড়ে নিতে চাইছে – যা সংবিধান প্রদত্ত।”

“আর সে কারণেই এই ইস্যুটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রেন্ড করছে।” এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও রবিবার তার নিয়মিত রেডিও ভাষণে ভারতের মুসলিমদের উদ্দেশে বলেন, এবারের রোজার মাসে তাদের অনেক বেশি কষ্ট করতে হবে – যদিও আজানের কথা তিনি উল্লেখ করেননি।

তিনি বলেন, “গত রমজানের সময় ভাবাও যায়নি এবারের রমজানে এত অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে।” তবে যেভাবে মহামারিতে “অন্য ধর্মের মানুষরাও ঘরে বসেই তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করছেন” – মুসলিমদেরও সেই একই কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বছরকয়েক আগে ভারতে বলিউড গায়ক সোনু নিগমও লাউডস্পিকারে আজান দেওয়ার রেওয়াজ বন্ধ করার ডাক দিয়ে প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলেন।
: বিবিসি বাংলা