করোনাভাইরাস: আমাজনে পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি, খুড়তে হচ্ছে গণকবর

করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। এই ভাইরাসের তাণ্ডবে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো। এর মধ্যে আমেরিকা, ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্স। এসব দেশের মধ্যে সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকার।

এদিকে, করোনাভাইরাস থাবা বসিয়েছে ব্রাজিলের আমাজন বনের মাঝে অবস্থিত সবচেয়ে বড় শহর মানাউশেও। সেখানে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে করোনা পরিস্থিতি। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে, মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চলা ওই শহর কর্তৃপক্ষকে খুড়তে হচ্ছে গণকবর।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, আমাজোনাস প্রদেশের রাজধানী মানাউশ হতে যাচ্ছে পরবর্তী গুয়াকুইল। সম্প্রতি ইকুয়েডরের এই শহরের রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে করোনায় আক্রান্তদের মৃতদেহ।

ব্রাজিলে করোনা সংক্রমণে সামনের সারিতে রয়েছে আমাজোনাস। স্বাস্থ্যসেবার দিক থেকেও রয়েছে অনেক পিছিয়ে। সব মিলিয়ে করোনা আমাজনের মাঝে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।

এপ্রিলে মানাউশে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে মৃত্যুর হার ৫৭৮% বেড়ে যায়। তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা রোগী বলে উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা ভিন্নমত দিচ্ছেন। কারণ এখানে করোনা পরীক্ষার হার খুবই কম, তাই প্রকৃত সংখ্যা জানার উপায় নেই।

সরকারি হিসেবে ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ৯২ হাজার, মৃত্যু সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি। অর্থাৎ, করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।

মানাউশের মেয়র আর্থার ভিরগিলিও বলেছেন, “আমরা কোনো অলৌকিকত্ব চায় না।” এ কথায় মূলত দেশটির প্রেসিডেন্ট জায়ার বলসোনারোকে এক হাত নিলেন, কারণ তার নামের মাঝে অংশ মেসিয়াহ হলেও করোনা প্রতিরোধে কিছুই করেননি। মেয়র জানান, তাদের দরকার স্ক্যানার, ভেন্টিলেটর, ওষুধ ও পিপিই-সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী।

মানাউশ ব্রাজিলের সপ্তম বড় শহর, জনসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। প্রায় বিচ্ছিন্ন এই শহরে অনেক অদিবাসীও বসবাস করেন। দারিদ্র, অপুষ্টি ও স্থানচ্যুতি মিলিয়ে করোনা তাদের অবস্থা সঙ্গীন করে তুলেছে।

অনেক নারী এখন মাস্ক সেলাইয়ে ব্যস্ত। কারণ তাদের কাছে সুরক্ষা সরঞ্জাম বলতে এটিই রয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “করোনার লক্ষণ নিয়ে সম্প্রদায়ের অনেক লোককে আমরা হারিয়েছি। আমাদের চিকিৎসার জন্য এখানে নেই কোনো চিকিৎসক বা নার্স।”

গত বছর আমাজন বড়সড় দাবানলের কবলে পড়ে। যা সারা বিশ্বে তোলপাড় তৈরি করে। সামনেই (জুলাই) আসছে দাবানলের সবচেয়ে খারাপ মৌসুম। যা করোনা পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলবে। একে বলা হচ্ছে ‘দ্বিগুণ সমস্যা’। ২০১৯ সালে ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে আড়াইগুণ বেড়েছিল। আর চলতি বছর তো হাসপাতালে যাওয়াই বিপদ। কারণ, করোনা রোগীতে পূর্ণ হাসপাতালগুলো।