তৃণমূল ছাড়ছেন শতাব্দী রায়!, শনিবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী শতাব্দী রায় এবার কি তবে তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়ছেন! বৃহস্পতিবার শতাব্দী রায় ফ্যান ক্লাবের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে আপাতত রাজ্যরাজনীতিতে সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।

ফেসবুক পোস্টে বীরভূমে তার নির্বাচনী কেন্দ্রের মানুষের প্রতি বার্তা দিয়ে তিনি লিখেছেন ‘…সম্প্রতি অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেছেন কেন আমাকে বহু কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না। আমি তাদের বলছি যে আমি সর্বত্র যেতে চাই। আপনাদের সাথে থাকতে আমার ভালো লাগে।’

এরপরই তিনি লেখেন ‘কিন্তু মনে হয় কেউ কেউ চায় না আমি আপনাদের কাছে যাই। বহু কর্মসূচির খবর আমাকে দেওয়া হয় না। না জানলে আমি যাব কী করে? এ নিয়ে আমারও মানসিক কষ্ট হয়। গত দশ বছরে আমি আমার বাড়ি থেকে বেশি সময় আপনাদের সাথে কাটিয়েছি। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি কাজ করার। তাই এই নতুন বছরে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছি যাতে আপনাদের সাথে পুরোপুরি থাকতে পারি।’
তিনি আরও লেখেন ‘সাংসদ অনেক পরে, তার অনেক আগে থেকেই শুধু শতাব্দী রায় হিসাবেই বাংলার মানুষ আমাকে ভালোবেসে এসেছেন। যদি কোনও সিদ্ধান্ত নিই আগামী ১৬ জানুয়ারী ২০২১ শনিবার দুপুর দু’টোয় জানাবো।’

শতাব্দীর এই পোস্ট ঘিরেই শুরু হয়েছে জল্পনা। তিনি কি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? আর কেনই বা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন? গোটা রাজনৈতিক মহল সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে তিনি কি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন।

ফেসবুক পোস্টের শুক্রবার নিজের মুখেই তিন বারের সাংসদ শতাব্দী বলেন ‘আমি দিল্লি যাচ্ছি। সেখানে বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনরা আছেন। তাদের সাথে দেখা হবে।’

অমিত শাহ’এর সাথে বৈঠকের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি তিনি। তিনি বলেন ‘এটা কোনও অযৌক্তিক নয় যে আমি অমিত শাহ’এর সাথে দেখা করতে পারি। আমি একজন সাংসদ। আমি সংসদ ভবনে যেতে পারি। স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক থাকে। তাছাড়া তিন বারের সাংসদকে দিল্লি যাওয়ার কারণ বলতে হবে?’

স্টার প্রসঙ্গে শতাব্দীর মন্তব্য ‘দল আমাকে শতাব্দী রায় বানায়নি। আমি নিজেই একজন স্টার ছিলাম। আমার প্রতি দলের সামান্যতম সম্মান রাখা উচিত। অনুষ্ঠানে আমায় যেতে দেওয়া হচ্ছে না এতে আমার খারাপ লাগছে। আমি বাড়ি বসে ওয়েব সিরিজ দেখে ও বেতন নিয়ে কাটাতে পারতাম। কিন্তু আমি তাই চাই না।’

দলের মধ্যে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণার পরই শতাব্দীর মান ভাঙাতে এদিন দুপুরে কলকাতার প্রিন্স আনোয়ার শাহ’এর বাড়িতে যান তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তার সাথে দীর্ঘ বৈঠক করেন তিনি। কিন্তু সেই বৈঠক ফলপ্রসু হয়নি বলে জানা গেছে। কারণ কুণাল বলেন, ‘শতাব্দী আমার পুরোনো বন্ধু। তার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা হল। শতাব্দী রায় তার সিদ্ধান্ত নেবেন।’

কুণালের পাশাপাশি তৃণমূলের সিনিয়র নেতা সৌগত রায়ও ফোনে অভিমানী শতাব্দীর সাথে কথা বলে মান ভাঙার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি বলেই জানা গেছে। এব্যপারে সৌগত রায়ও বলেন, ‘দেখা যাক শনিবার শতাব্দী কি সিদ্ধান্ত নেয়।’
এরপর সন্ধ্যায় কুণাল দক্ষিণ কলকাতার ক্যামাক স্ট্রীটে মমতা ব্যনার্জির ভাতিজা ও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির অফিসে শতাব্দীকে নিয়ে যান বলে খবর। সেখানে অভিষেকের সাথে বৈঠকের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

ইতিমধ্যেই তারাপীট উন্নয়ন পর্ষদের সদ্যপদে ইস্তফা দিয়েছেন শতাব্দী রায়। এনিয়ে তিনি বলেন ‘আমি দুই বার তারাপীঠ উন্নয়ন পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তা গৃহীত হয়নি।’

তৃণমূলের টিকিটে গত ২০০৯ সালে বীরভূম কেন্দ্র থেকে প্রথমবারের জন্য সাংসদ নির্বাচিত হন শতাব্দী। এরপর ২০১৪ ও ২০১৯ সালে পরপর দুইটি মেয়াদে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন তিনি।

তবে কেবল শতাব্দীই নয়, ইতিমধ্যেই তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন রাজ্যের অন্যতম প্রভাবশালী মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, ব্যরাকপুরের বিধায়ক শিলভদ্র দত্ত, কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামী, বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের সাংসদ সুনীল মন্ডল সহ দলের ৩৫ জন নেতা।

কয়েকদিন আগেই দল ও মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন মন্ত্রী লক্ষীরতন শুক্লা। রাজ্যের আরেক সিনিয়র মন্ত্রী (বনমন্ত্রী) রাজীব ব্যনার্জিও দলের সাথে দূরত্ব তৈরি করেছেন। সব মিলিয়ে রাজ্যে (সম্ভাব্য এপ্রিল-মে) বিধানসভার নির্বাচনের আগে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ঘাসফুল শিবির।