চীনে উইঘুর মুসলিম নির্যাতন: মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্তে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্তে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এ সময় দেশটির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন ও গণবন্দির বিভিন্ন প্রতিবেদন উদ্ধৃত করা হয়। বরাবরের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করেছে চীন সরকার।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংখ্যালঘু মুসলিম উইঘুর অধ্যুষিত শিনজিয়াং প্রদেশকে এক ধরনের বন্দিশালায় পরিণত করেছে চীন সরকার। বিভিন্ন বন্দিশালায় ১০ লাখের বেশি মানুষ বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন। উইঘুর মুসলমানদের ওপর চীন সরকারের বর্বরতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশের উদ্বেগ ও প্রতিবাদের পরও মুসলিমদের এখনো বন্দি করার অভিযোগ উঠেছে।

বিভিন্ন প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে জাতিসংঘের কাছে উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর নির্যাতনের বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। যে হারে তাদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে সেটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। উইঘুর মুসলমানদের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানায় নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (চীন) পরিচালক সোফি রিচার্ডসন বলেন, বিশ্বের যে কোনো দেশ যদি চীনের মতো এ মাত্রায় মানবতাবিরোধী অপরাধ করতো তাহলে এতক্ষণে আমরা তদন্ত করে ফেলতাম। হিউম্যান রাইটসের পক্ষ থেকে আমরা সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।

শিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর নির্যাতনকে গণহত্যা অ্যাখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে চীনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর ভ্রমণ ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।

যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি নামীদামি প্রতিষ্ঠান চীন থেকে কাপড়ের তুলা ও টমেটো আমদানি বন্ধ রেখেছে। শিনজিয়াংয়ে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনকে গণহত্যা আখ্যা দিয়েছে বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও কানাডার আদালতও।

জোর করে পরিশ্রম করানোর তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রস্তাবিত চীন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিনিয়োগ চুক্তি স্থগিত রাখারও আহ্বান জানায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ বলেন, জোর করে পরিশ্রম করানোর বিষয়ে তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে পণ্য আমদানি করা উচিত নয়। আমরা মনে করি, সেখানে এখনো দমন-পীড়ন চলছে। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।

জোর করে অমানবিক পরিশ্রম করানোর পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করারও অভিযোগ রয়েছে চীন সরকারের বিরুদ্ধে।

যদিও চীন সরকার এ বন্দি শিবিরকে ‘সংশোধনাগার’ আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তাদের সেখানে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

সবশেষ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে উইঘুর মুসলিমদের ওপর গণহত্যার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়।

এর আগে উত্তরাঞ্চলীয় শিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর ও অন্য সংখ্যালঘু মসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চীন গণহত্যা চালিয়েছে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের একটি দ্বিদলীয় কমিশন। দ্য কংগ্রেশনাল-এক্সিকিউটিভ কমিশন অন চায়না (সিইসিসি) বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) জানায়, গতবছর চীনের শিনজিয়াং অঞ্চলে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং সম্ভবত গণহত্যা চালানো হয়েছে’ বলে নতুন কিছু তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত উইঘুর মুসলিমদের চীন হয়রানি করছে বলেও জানিয়েছে ওই কমিশন।