বৃহস্পতিবার পবিত্র হজ

মক্কার অদূরে মিনা যাত্রার মধ্য দিয়ে বুধবার শুরু হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান-নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক’ ধ্বনিতে মুখর করে কমপক্ষে ২০ লাখ হজযাত্রী মিনায় সমবেত হয়েছেন।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার আরাফা দিবস অর্থাৎ পবিত্র হজ। পবিত্র হজ পালনের জন্য যেমন বুধবার রাত থেকেই হজযাত্রীরা মিনা থেকে আরাফায় রওনা হবেন, তেমনি গতরাত (মঙ্গলবার) থেকেই তারা মিনায় আসতে শুরু করেন। মহানবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রদর্শিত পদ্ধতি অনুযায়ী বুধবার বাদ ফজর হজযাত্রীদের মক্কা থেকে মিনা যাওয়ার কথা। কিন্তু ২০ লাখ হজযাত্রী পরিবহনের সুবিধার্থে সৌদি সরকার নিযুক্ত মুয়াল্লিমরা পূর্বের রাত থেকেই হজযাত্রীদের মিনায় স্থানান্তর শুরু করেন। অনুরূপ ৯ যিলহজ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফার ময়দানে গমন সুন্নাত হলেও বিশাল সংখ্যক হজযাত্রীর আরাফায় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আগের (৮ যিলহজ) রাত থেকেই তাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল বাসে করে স্থানান্তর শুরু করে দেন।

হজের জন্য নির্ধারিত ৫ দিনের প্রথম দিন বুধবার মিনায় হজযাত্রীরা অবস্থান করে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন। রাতে পুনরায় তাদের নিয়ে যাওয়া হবে আরাফার ময়দানে। সেখানে জোহর ও আসর আদায় করবেন। আরাফাত ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামেরা থেকে খতিব সাহেব হজের খুৎবা পাঠ দেবেন এবং জোহর ও আসর এক আজান দুই ইকামাতে কসর অর্থাৎ দুই রাকাত জোহর ও দুই রাকআত আসর নামাজ আদায় করবেন। আর তাঁবুতে অবস্থানরতদের মধ্যে মুকীমরা জোহরের সময় জোহর ও আসরের সময় আসর নামাজ আদায় করবেন। আর মুসাফিররা এক আজানে দুই ইকামাতে জোহর ও আসর কসর করে আদায় করবেন। এরপর মাগরিব পর্যন্ত অবস্থান করে জীবনের যাবতীয় গুনার ক্ষমা চেয়ে কাঁকুতি মিনতি করে মুনাজাত করতে হবে। এছাড়া দেশ-দশের উন্নতি, অগ্রগতি, বালা-মুসিবত থেকে নাজাত এবং মৃত-জীবিত নিকটাত্মীয়দের মাগফিরাত কামনায় মুনাজাত করতে হবে। আরাফাতে অবস্থানকেই মূলত হজ বলা হয়।

মহানবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল-হাজ্জু আল-আরাফাহ’ অর্থাৎ আরাফাতে অবস্থানই হচ্ছে হজ। যারা আরাফাতের সীমানায় অবস্থান করবে না তার হজ হবে না।

সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করে চলে যেতে হবে মুযদালিফায়। হেঁটে বা গাড়িতে চড়ে আরাফাহ থেকে মুযদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশা নামাজ আদায় করতে হবে। মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপই নির্দেশ দিয়েছেন। হজের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দিন জামারাতে নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় (৪৯টি) পাথর এখান থেকেই অনেকে সংগ্রহ করে থাকেন। মিনাতেও প্রয়োজনীয় পাওয়া যায়। মুযদালিফায় খোলা আকাশের নিচে মাথা না ঢেকে ঘুমিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে নিতে হবে পরের দিনের কার্যক্রম সহজভাবে করার স্বার্থে। বাদ ফজর মুযদালিফা থেকে মিনায় ফিরতে হবে। তবে সঙ্গে মাজূর (বিভিন্ন সমস্যায় থাকা) ব্যক্তি থাকলে রাত্রী দ্বিপ্রহরের পরও মুযদালিফা ত্যাগ করা যায়।

হজের তৃতীয় দিন অর্থাৎ আগামী শুক্রবার হজযাত্রীদের সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাবার আগেই জামারাতুল আকাবা বা বড় জামরাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। এরপর কেউ ইচ্ছা করলে সেখান থেকেই হারাম শরীফে ফরজ তাওয়াফ করতে মক্কায় যেতে পারেন। অথবা কোরবানির টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করে থাকলে মিনায় তাঁবুতে এসে মাথা মুণ্ড বা চুল ছোট করে ইহরাম থেকে প্রথম দফা হালাল হয়ে স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করতে পারবেন। ফরজ তাওয়াফ না করলে দ্বিতীয় দফা হালাল তথা স্ত্রী সংসর্গে আসা যাবে না।

হজের চতুর্থ ও ৫ম দিন সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাবার পর জামারাতে গিয়ে ছোট থেকে বড় ৩টি জামারাতে ৭টি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। অসুস্থ ও দুর্বল নারীরা জামারাতে যেতে সক্ষম না হলে তার পক্ষ থেকে নিযুক্ত ওয়ালি তার নিজের পাথর নিক্ষেপের পর অপরের পাথর নিক্ষেপ করে দেবেন।

প্রতিদিন হজযাত্রীকে মিনার তাঁবুতে এসে অবস্থান করতে হবে। এটা সুন্নাত। তবে কারো কারো মতে ওয়াজিব এবং এটা না করলে দম দিতে হবে। ৫ম দিন সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাবার পর ৩টি জামারাতে কঙ্কর মেরে দ্রুত এসে সূর্য অস্ত যাবার আগেই মিনা ত্যাগ করতে হবে। নইলে ৬ষ্ঠ দিবস সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাবার পর আবারো ৩টি জামারাতে ৭টি করে কঙ্কর মেরে মিনা ত্যাগ করতে হবে।

মক্কায় ফিরে হজযাত্রীরা বিদায়ী তাওয়াফ করে স্বদেশে ফিরে যাবেন। তবে যারা দেরিতে মক্কা ত্যাগ করবেন তারা বিদায়ের দিন বিদায়ী তাওয়াফ করবেন।

এদিকে হজযাত্রীদের নিরাপত্তায় সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। ২০১৫ সালের হজে মিনায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় দুই হাজারেরও বেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়। সেই মর্মান্তিক ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আর যাতে সে ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পথে পথে সহযোগিতার জন্য পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাবেসী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের উত্তম ব্যবস্থা রয়েছে হজযাত্রীদের গমনাগমনের দীর্ঘ পথ জুড়েই।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, ৩০ আগস্ট, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিকে