ঘরের দেওয়াল থেকে ‘বাবা’র ছবির ঠাঁই হচ্ছে নর্দমায়

নিত্য দিন একের পর কুকীর্তি ফাঁস হয়ে চলেছে ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিমের। সেই সব খবর যত চাউর হচ্ছে, ততই খালি হচ্ছে ‘বাবা’র অতি সাধের ডেরা। এক দিন গুরমিতের টানে যাঁরা ডেরায় আশ্রয় নিয়েছিলেন আজ তাঁরাই বিমুখ। রোজই কেউ না কেউ ডেরা ছাড়ছেন। আর ঘরের দেওয়াল থেকে ‘বাবা’র ছবির ঠাঁই হয়েছে নর্দমায়।

তেমনই একজন মনজিৎ সিংহ। বছর দু’য়েক আগে ডেরায় এসেছিলেন। বাবা গুরমিতের অনেক গুণের কথা শুনেছিলেন। সেই মোহের টানেই ডেরায় আসা। বাবার শিষ্যত্ব গ্রহণ করা। ডেরার সেবা করে গিয়েছেন মনে প্রাণে।

মাঝে মাঝে বন্ধুরা গুরমিতকে নিয়ে ‘কুকথা’ বললেও, সে সব মানতে মন চায়নি তাঁর। কিন্তু, আজ সব প্রমাণিত।

মনজিতের কথায়, অনেক অভিযোগ শুনেছি। বিশ্বাস করিনি। বাবাজিকে যখনই দেখতাম সব ভুলে যেতাম। আজ আমার সব ভুল ভেঙে গিয়েছে। ওঁর উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। আর কোনও দিন কোনও গডম্যানকে বিশ্বাস করব না। গতকাল শনিবার সকালেই ডেরা ছেড়ে সিকিমে নিজের বাড়ির পথে রওনা দেন মনজিৎ।

একই কথা একুশ বছরের পূজা ইনসানের মুখেও। ভারতের ছত্তীসগঢ়ের মেয়েটা ২০১৫ সালে ‘এমএসজি: দ্য মেসেঞ্জার’ এবং ‘এমএসজি-২: দ্য মেসেঞ্জার’ মুক্তির পরই বাবার ভক্ত হয়ে ওঠেন। তার পরই বাড়ি ছেড়ে সরাসারি ডেরা সচ্চায় বাবার কাছে। গ্রহণ করেন শিষ্যত্ব।

সে দিনের কথা আজও ভোলেননি পূজা। বলছেন, বাবাকে দেখলেই কেমন যেন হয়ে যেতাম। নিজেকে পবিত্র মনে করতাম। বাবার টানেই তার পর আর বাড়ি ফিরতে পারিনি। কিন্তু আর নয়। সব জেনে ঘৃণা ধরে গিয়েছে। গত ৩০ অগস্ট হরিয়ানা পুলিশের সহায়তায় ডেরা থেকে বাড়ি ফিরেছেন পূজা।

শুধু কি ডেরা সদস্যদের মোহভঙ্গ! একই ছবি, গুরমিতের ছোটবেলার গ্রামেও। ‘বাবা’র জনপ্রিয়তা তলানিতে রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানগর জেলার গুরুসার মুণ্ডিয়া গ্রামেও। ১৯৬৭ সালের ১৫ অগস্ট এখানেই জন্মেছিলেন রাম রহিম। বড় হওয়া ওখানেই।

ভগবানের মতো সেই গ্রামের প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস-ভক্তি করতেন তাকে। কমবেশি প্রায় প্রতিটি ঘরেই ছিল গুরমিতের ছবি। কিন্তু, আদালতের রায়ের পরে পাল্টে গিয়েছে ছবিটা। সত্যিটা সামনে আসার পর এখন আর ঘরের দেওয়ালে নয়, নর্দমায় ঠাঁই হয়েছে গুরমিতের ছবির।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিকে