অস্ট্রেলিয়ায় শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা, রাস্তায় কিলবিল করছে কুমির!

শতাব্দীর ভয়াবহতম বন্যায় ভাসছে অস্ট্রেলিয়া। এই মহাদেশের উত্তর-পূর্ব অংশ কার্যত জলের নীচে। জলের তলায় স্কুল, কলেজ, বিমানবন্দর সহই। এমনকি জলের তোড়ে রাস্তায় উঠে এসেছে কুমির ও। বন্যার প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কুইন্সল্যান্ড। বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকে আটকে পড়া দুর্গতদের উদ্ধারকাজে নেমেছে অস্ট্রেলিয়ার সেনাবাহিনী।

এই সময়টা বরাবরই এই অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু এরকম ভয়াবহ বর্ষণ কোনওদিন দেখেননি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রবিবার বিকেলে ফ্লাডগেট খুলে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এর ফলে প্রবল তোড়ে জল এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় গোটা এলাকা।

‘এরকম বন্যা কোনওদিনও দেখিনি। বৃষ্টি না থামলে আর কী অপেক্ষা করে আছে জানি না।’ আক্ষেপ শোনা গেল স্থানীয় রেডিও সাংবাদিক গাবি এলগুডের মুখে। জলের তোড়ে এমনকি রাস্তায় উঠে এসেছে কুমির। সঙ্গে রয়েছে ধস, বিদ্যুত্‍ বিপর্যয়ও। সব মিলিয়ে কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে উত্তর-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার, তা কেউই বলতে পারছে না।

জরুরি সংস্থাগুলো ভয়াবহ এ দুর্যোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছে না। শুধু রোববার রাতেই উদ্ধারকর্মীরা ১৮ জনকে পানি থেকে উদ্ধার করেছে। এরা বন্যার পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছিল।

রাজ্যপ্রধান আনাস্তাসিয়া প্যালাজজুক বলেন, ১ হাজার ১০০ জনের বেশি জরুরি সহায়তা চেয়েছে। টাউন্সভিলের প্রায় ৪০০ বাসিন্দা নিকটস্থ লাভারাক সেনা ব্যারাকে আশ্রয় নিয়েছে। রেডক্রসও দুর্গতদের সহায়তা ও উদ্ধার তৎপরতায় এগিয়ে এসেছে।

স্থানীয় কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার স্কট উইন্টার বলেন, ‘রাতভর ছোট নৌযানের সাহায্যে মানুষদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’ প্যালাজজুক আগামী দিনগুলোতে উপদ্রুত অঞ্চলগুলোর বাসিন্দারা আরও কঠিন সময়ের সম্মুখীন হতে পারেন বলে সতর্ক করেছেন। ভয়াবহ বন্যায় স্কুল ও আদালতগুলো বন্ধ রয়েছে। আরও বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি নদীতে জরুরি সতর্কতা বহাল রাখা হয়েছে।

এরগোনের মুখপাত্র এমা অলিভেরি বলেন, ১৬ হাজারের বেশি লোক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় অন্ধকারের মধ্যে রয়েছেন। কখন পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারছেন না।

আবহাওয়া ব্যুরো জানায়, টাউন্সভিল থেকে সামান্য উত্তরে ইনগাম শহরে সোমবার সকালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ১০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কর্মকর্তারা বলেন, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ২০ হাজার বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যেতে পারে। প্যালাজজুক বলেন, ‘২০ বছরের মধ্যে না, ১০০ বছরে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এর আগে এ ধরনের বন্যা দেখিনি।’

আবহাওয়া ব্যুরোর মুখপাত্র অ্যাডাম ব্লাজাক বলেন, বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাছাড়া বৃষ্টিপাত কমে আসার পরও বন্যার পানি নেমে যেতে কিছুটা সময় লাগবে।

টাউন্সভিলের বাসিন্দা ক্রিস ব্রুকহাউস জাতীয় সম্প্রচার কেন্দ্র এবিসিকে বলেন, ‘আমি এর আগে কখনো এমন বন্যা দেখিনি।’

 

তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ি বন্যার পানিতে এক মিটারেও বেশি তলিয়ে গেছে। তবে এবারের এ বৃষ্টিপাত কুইন্সল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলে খরা কবলিত কৃষকদের স্বস্তি এনে দিয়েছে। অঞ্চলটিতে মারাত্মক খরা চলছিল। 

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/বিএনকে