ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে সৌদি যুবরাজের

বিশ্লেষকরা সৌদি আরবের প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সম্প্রতি মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক পর্যায়ের বেশ কয়েকটি বৈঠকে হাজির না হওয়ায় এই প্রশ্ন উঠেছে। বাদশাহ সালমানের সিদ্ধান্তে যুবরাজের ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ভেতরে ভেতরে তিক্ততা বেড়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, অর্থনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্টতই অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছে সূত্র। তাছাড়া জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে নারী রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে থাকা নিজের ভাইকে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত এমন সময় যুবরাজ ঘোষণা করেছেন যখন বাদশাহ সালমান আনুষ্ঠানিক সফরে মিশরে গেছেন।

সৌদি রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এমবিএস নাম পরিচিত এই যুবরাজ প্রচণ্ডভাবে সমালোচিত হন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের আদেশ দেওয়ার অভিযোগে। সৌদি আরব বারংবার অভিযোগ অস্বীকার করলেও শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক চাপে স্বীকার করে, তুরস্কের ইস্তানবুলে অবস্থিত দেশটির কনস্যুলেটে এক হতাহাতির ঘটনায় সাংবাদিক জামাল খাশোগির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ জানিয়েছে, এ হত্যাকাণ্ড যুবরাজের সিদ্ধান্তেই সংঘটিত হয়েছে। অন্যদিকে ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের নেতৃত্বে যুদ্ধ চলছে। বেপরোয়া বিমান হামলায় বহু বেসামরিক ইয়েমেনির মৃত্যুর ঘটনায় সৌদি আরব ও যুবরাজের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমালোচনা প্রবল হয়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি, যুবরাজের ক্ষমতা যে সীমিত করে দেওয়া হতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে নাকি বাদশাহ সালমান গত সপ্তাহেই কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীকে আভাস দিয়ে রেখেছিলেন। বাদশাহ ওই সভায় যুবরাজকেও উপস্থিত থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু যুবরাজ সেখানে উপস্থিত হতে পারেননি। সভায় জানানো হয়েছে, যুবরাজ এতোদিন অর্থনৈতিক বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নিতেন এখন থেকে সেগুলোর বিষয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে দেখাশোনা করবেন মুসায়েদ আল আইবান। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা এই উপদেষ্টা বাদশাহ সালমানের অত্যন্ত বিশ্বস্ত।

দ্য গার্ডিয়ানকে একটি সূত্র জানিয়েছে, শুধু ওই বৈঠকই নয়, সম্প্রতি বাদশাহ উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয় পর্যায়ের এমন আরও দুইটি বৈঠকে হাজির হননি যুবরাজ।  কূটনৈতিক বৈঠকগুলো থেকেও দূরে থাকছেন এমবিএস। গত সপ্তাহে সৌদি আরব সফরে গিয়েছিলেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। যুবরাজ তার সঙ্গেও বৈঠক করেননি।

এ সপ্তাহের শুরুতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও তাকে অনুপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। এসব ছাড়াও সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের প্রধান, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী এবং ভারত-চীনের মতো দেশের রাষ্ট্রদূতের জন্য আয়োজিত বৈঠকে যুবরাজকে অনুপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র স্বীকার করেছেন, মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ল্যাভরভের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে তিনি সেই সঙ্গে এটাও দাবি করেন, এ ধরনের কোনও বৈঠক আগে থেকে নির্ধারণ করা ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে দ্য গার্ডিয়ানকে কোনও তথ্য দেয়নি। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খাশোগি হত্যা ও ইয়েমেন যুদ্ধের কারণে যুবরাজ এমবিএসের বিষয়ে যে সমালোচনা শুরু হয়েছে তা থামাতেই যুবরাজের লাগাম কিছুটা হলেও টেনে ধরতে চাইছেন বাদশাহ। কিন্তু অন্যদিকে যুবরাজের অনুপস্থিতিতে তিনি অসন্তুষ্টও হচ্ছেন। সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার বাদশাহ সালমান তার অনুপস্থিতির কারণে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তিনি অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করেন। সৌদি আরবের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলোর একটি বিনিয়োগ হারানো।

গত সপ্তাহে বাদশাহ ও যুবরাজের মধ্যে থাকা অসন্তুষ্টির বিষয়টি বেড়ে যায়। সালমান মিসরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর এমবিএস দুইটি বিষয়ে ‘এককভাবে’ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রিন্সেস রিমা বিনতে বন্দর বিন সুলতানকে যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে থাকা নিজের ভাই খালিদ বিন সালমানকে পদন্নোতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাদশাহ সালমানকে ‘না জানিয়েই’ ঘোষণা করেছেন যুবরাজ।

Scroll to Top