আজ হুমায়ূন জয়ন্তী, আজও তোমায় পরে মনে

\’নদীর নাম ময়ূরাক্ষী কাক কালো তার জল/কেউ কোনোদিন সেই নদীটির পায়নি খুঁজে তল/তুমি যাবে কি সেই ময়ূরাক্ষীতে/হাতে হাত রেখে জলে নাওয়া/যে ভালোবাসার রং জ্বলে গেছে/সেই রংটুকু খুঁজে পাওয়া।\’ নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের অভিমান ভাঙাতে শব্দসম্ভারে সাজিয়েছিলেন এ গান। বাড়ির আঙিনায় প্রিয়জনের আড্ডামুখর কোনো এক সন্ধ্যায় কণ্ঠশিল্পী এসআই টুটুলকে দিয়ে গাইয়েও ছিলেন। সেই গান শুনেই হুমায়ূনপত্নীর অভিমান ভাঙে। ভুলে যান অভিমানের বিষয়বস্তু। এ এক অনন্য ভালোবাসার নিদর্শন। নন্দনকানন নুহাশপল্লীর লিচুতলায় ঘুমিয়ে থাকা সেই গুণী মানুষটি কি আজও লিখছেন সেই গান! ফেলে যাওয়া আপনজনের জন্য কি আজও তার মন কাঁদে! সবই অজানা। তবে তার জন্য কাঁদেন বাংলার অগণিত পাঠক, শ্রোতা। কাঁদে তার নুহাশপল্লীর লতা-পাতা, বৃক্ষরাজি।

আকস্মিক ক্যান্সার ক্ষণজন্মা এই কথাশিল্পীকে আনন্দময় জীবন থেকে কেড়ে নেয় ২০১২ সালে। সেই থেকে প্রকৃতিও তার প্রিয়জনকে হারানোর বেদনায় ম্লান হয়ে আছে। তার অসামান্য সাহিত্যকীর্তি আজ বাঙালি ও বাংলাদেশের সম্পদ। তাই হুমায়ূন-মুগ্ধ পাঠকের হৃদয়ে তিনি চিরায়ত হয়ে আছেন তার আশ্চর্যসুন্দর রচনাবলির মাধ্যমে। আজ বুধবার, বাঙালির হৃদয়নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মদিন। এবারও নানা আয়োজনে উদযাপিত হবে দিনটি।

১৯৭২ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস \’নন্দিত নরকে\’ দিয়েই হুমায়ূন আহমেদ বাংলা কথাসাহিত্যের পালাবদলে তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত রাখতে সক্ষম হন। এরপর একের পর এক উপন্যাসে পাঠকের কাছে নন্দিত হয়ে ওঠেন অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা নিয়ে। আমৃত্যু সেই জনপ্রিয়তার স্রোতে ভাটার টান পড়েনি।

হুমায়ূন আহমেদের জন্ম নেত্রকোনার কুতুবপুরে ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে শহীদ হন। মা আয়েশা ফয়েজ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের মেধাবী ছাত্র হুমায়ূন আহমেদ অধ্যয়ন শেষে ওই বিভাগেই প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। দুই দশক পর তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে লেখালেখি, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণে পূর্ণাঙ্গভাবে যুক্ত হন। এর মধ্যে তিনি সাহিত্যে অনন্য উচ্চতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। গল্প, উপন্যাস, নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা, সংগীত রচনা, চিত্রাঙ্কনসহ শিল্প-সাহিত্যের অনেক ক্ষেত্রে তিনি রেখে গেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর।

২০১২ সালের ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি আমেরিকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে পুরো দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাকে সমাহিত করা হয় তারই গড়ে তোলা নন্দনকানন নুহাশপল্লীর লিচুতলায়।

হুমায়ূন আহমেদ তার দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্যজীবনে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। দেশের বাইরেও সম্মানিত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। জাপানের এনএইচকে টেলিভিশন তাকে নিয়ে \’হু ইজ হু ইন এশিয়া\’ শিরোনামে ১৫ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র প্রচার করে।

জন্মদিনের কর্মসূচি: ঘরোয়াভাবে কেক কাটার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন আজ হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বরাবরের মতো এবারও হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রকাশকরা আয়োজন করছেন \’হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের একক মেলা\’। আজ বিকেল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে বইমেলা শুরু হবে। হুমায়ূনের জন্মদিনকে ঘিরে চ্যানেল আই দিনব্যাপী হুমায়ূন মেলার আয়োজন করেছে। তার সৃষ্ট নুহাশপল্লীতেও রয়েছে বিভিন্ন আয়োজন।

Scroll to Top