জেসিন্ডার পথ ধরেই সম্পূর্ণ করোনামুক্ত যে ৮ দেশ!

গোটা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যেখানে লাফিয়ে লাফিয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, ঠিক সেখানেই নজির গড়েছে নিউজিল্যান্ড। গত সোমবার অর্থাৎ ৮ জুন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডে শেষ করোনা আক্রান্ত রোগীও মহামারী এই রোগ জয় করে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন।

পাশাপাশি এই কিউয়ি প্রধানমন্ত্রী আরও তথ্য দিয়েছেন যে, গত ২২ মে-র পর থেকে সে দেশে নতুন করে আর একজন রোগীও করোনার কবলে পড়েননি। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডে প্রথম করোনা আক্রান্তের হদিশ মেলে। এই দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১৫৪ জন। মারা গিয়েছেন ২২ জন। প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর মূল চাবিকাঠি হচ্ছে, কঠোর লকডাউন।

তবে শুধু নিউজিল্যান্ডই নয়। আরও গুটিকয়েক দেশ রয়েছে, যারা লকডাউনের কঠোর অনুশাসন পালন করে করোনাকে টাটা বাই বাই করেছে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক, নিউজিল্যান্ড ছাড়া আর কোন কোন দেশ করোনামুক্ত।

১. মন্টিনেগ্রো : একেবারে যুদ্ধজয়ী রাজার মতো ইউরোপের বুকে বসনিয়া ও সার্বিয়ার সঙ্গে সীমানা ভাগ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে মন্টিনেগ্রো দেশটি। ১৭ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্তের খবর মেলে বালকানস তীরের ছোট্ট দেশ মন্টিনেগ্রো থেকে। আর তারপরে লকডাউনের পথই বেছে নেয় ৬ লক্ষ ২২ হাজার ৩৫৯ জনের এই দেশ। লকডাউন এমনই কঠোর অনুশাসনের সঙ্গে সে দেশে পালিত হয় যে, ৩২৪ জনেই আটকে যায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। ২৪ মে মন্টিনেগ্রোর প্রেসিডেন্ট মিলো দুকানোভিক ঘোষণা করেন, তার দেশ সম্পূর্ণ ভাবে করোনামুক্ত।

২. ​ইরিত্রিয়া : আফ্রিকার পূর্ব প্রান্তের দেশ ইরিত্রিয়ায় ৬০ লক্ষ মানুষের বসবাস। সে দেশ ২১ মার্চ নরওয়ে ফেরত এক ব্যক্তির দেহে প্রথম ধরা পড়ে করোনাভাইরাস। লকডাউনেপ পথে হেঁটেছিল ইরিত্রিয়াও। একজন আক্রান্ত হওয়ার পরই কঠোর নিয়ম পালন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৩৯ জনেই বেঁধে ফেলে ইরিত্রিয়া। ১৫ মে ইরিত্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ইসাইয়েস অ্যাফওয়ের্কি রূপরেখা পরিষ্কার করে দেখিয়ে দেন, তাঁর দেশে আর একটিও করোনা রোগী নেই।

৩. ​পাপুয়া নিউ গিনি : ৮০ লক্ষ ৯০ হাজার মানুষ বসবাস করেন ওশিয়ানিয়ার এই দেশ। মার্চ মাসের ২০ তারিখ প্রথম করোনা পজিটিভ কেসের সন্ধান মেলে পাপুয়া নিউ গিনি-তে। তারপর সে দেশে জরুরি ভিত্তিতে জারি হয় রাত্রিকালীন কারফিউ। রাতারাতি বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্দোনেশিয়া সীমান্ত। এশিয়া থেকে যাত্রী আসাও নিষিদ্ধ করে দেয় এই দেন পাপুয়া নিউ গিনি সরকারের প্রধান জেমস ম্যারাপে (James Marape)। মাত্র ৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন এই দেশে। গণপরিবহন ও জমায়েত বন্ধ করেই ৪ মে করোনা মুক্ত হয়েছে এই দেশ।

৪. ​সিসিলি : ব্রিটেনের কাছে পরাধীনতার গ্লানি বহু দিন সহ্য করে এই দেশ। তারপর ১৯৭৬ সালের ২৯ জুন স্বাধীন হয় সিসিলি। রাজধানীর নাম ভিক্টোরিয়া। ১৪ মার্চ প্রথম দু\’জনের দেহে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে এই দেশে। করোনা ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সময় নষ্ট না করে বন্ধ করা হয় যুদ্ধ জাহাজ। চীন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইরানের সঙ্গে সব ধরনের যাতায়াতও বন্ধ করে দেয় সিসিলি। ৯৭ হাজার ৯৬ জনের জনসংখ্যা এই দেশে। আর করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন মাত্র ১১ জন। সকলেই সুস্থ। সিসিলির প্রেসিডেন্ট নেলো মুসুমেসি (Nello Musumeci) দেশকে করোনা মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেন।

৫. ​হলি সি : \’রোমান কোর্ট\’ দ্বারা পরিচালিত দেশ করোনা সংক্রমণ রোধে বড় ভূমিকা নিয়েছিল। মাত্র একজনের শরীরে করোনা ধরা পড়ার পর এই দেশে সব ধরনের পর্যটন বন্ধ করা হয়। বন্ধ করা হয়েছিল নানা ক্ষেত্রে জমায়েতও। অল্প সময়ের জন্য লকডাউন জারি করেও সুফল লাভ করেছিল হলি সি। দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১২ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছিল। ৬ জুন সম্পূর্ণ ভাবে করোনামুক্ত হয় হলি সি। দেশ করোনামুক্ত হওয়ার ঘোষণা করেছিলেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট জিউসিপ্পি বার্তেল্লো (Giuseppe Bertello)।

৬. সেইন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস : ক্যারিবিয়ান এই দেশের জনসংখ্যা ৫২ হাজার ৪৪১। ২৪ মার্চ এখানে প্রথম করোনা হানার খবর পাওয়া যায়। তারপর বন্ধ করা হয় বিমানবন্দর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় সব ধরনের দোকানপাট। জারি করা হয় কারফিউ। আর তারই ফল মেলে হাতনাতে। শেষমেশ সে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫তে। ১৯ মে নিজের দেশকে করোনা মুক্ত বলে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী টিমোথি সিলভেস্টার হ্যারিস (Timothy Sylvester Harris)।

৭. ​ফিজি : ওশিয়ানিয়ার এই আইল্যান্ডেও দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্রিটেনের কাছে পরাধীন ছিল। ফিজি-তে হিন্দি ভাষার যথেষ্ট প্রচলন রয়েছে। ১৯ মার্চ এই দেশে প্রথম করোনা আক্রান্তর সন্ধান মিলেছিল। তারপরই প্রধানমন্ত্রী ফ্র্যাঙ্ক বেইনিমারামা (Frank Bainimarama) বন্ধ করে দেন বিমান পরিষেবা। বাইরে থেকে আগত সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয় ১৫ দিনের কোয়ারানটিন। কঠোর লকডাউনও পালন করে এই দেশ। ফিজি-তে মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৮ জনের শরীরে কোভিড পজিটিভ উপসর্গ মেলে। মাত্র কয়েকদিনের লকডাউনেই আর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়েনি সে দেশে। ২০ এপ্রিল নিজেদের করোনা মুক্ত বলে ঘোষণা করেন ফিজি-র প্রেসিডেন্ট জিওজি কোনরোতে (Jioji Konrote)।

৮. পূর্ব তিমোর : এশিয়ারই এক দেশ পূর্ব তিমোর করোনা সংক্রমণ রোধে গোটা বিশ্বকে দিশা দেখিয়েছে। পূর্ব তিমোরের রাজধানী দিলি (Dili)। ২১ মার্চ এই দেশে প্রথম করোনা আক্রান্তের হদিশ মেলে। সঙ্গে সঙ্গে লকডাউন জারি করা হয়। যদিও ১০ ফেব্রুয়ারি থেকেই চিন থেকে মানুষের পূর্ব তিমোরে আসা পুরোপুরি ভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ করা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জমায়েত। অন্য দেশ থেকে আসা মানুষজনের জন্য অত্যাবশ্যক করা হয় ১৪ দিনের কোয়ারানটিন। মোট ২৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন পূর্ব তিমোরে। ১৫ মে সুস্থ হয়ে ওঠেন দেশের ২৪ তম করোনা রোগীও। আর তারপরই পূর্ব তিমোর-কে করোনা মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেন ফ্রান্সিসকো গুতেরেস (Francisco Guterres)।
: এই সময়।

Scroll to Top