পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৬ মাস কাতরানোর পর দীপংকর বালার বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেটে দেয় ইকোনমি ক্লাসের প্লেনের টিকিট। তাকে এমন গুরুতর অবস্থায় বিদেশে নিতে প্রয়োজন নিদেনপক্ষে বিজনেস ক্লাসের টিকিট। ফলে ফিরিয়ে দেয় এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেউই দীপংকরের খোঁজ নিচ্ছে না। ফলে পা পচে যাওয়ার উপক্রম।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত মাদারীপুরের দীপংকর বালা বাম পায়ে গুলি লাগার পর থেকে ঢাকা মেডিকেলে শয্যাশায়ী। অভ্যুত্থানের ওপর গঠিত সরকারের ৬ মাস পার করার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গত ২৭ জানুয়ারি তুরস্কে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে সেই সিদ্ধান্তও আলোর মুখ দেখেনি গাফেলতির কারণে। দীপংরের পা ভাঁজ করা অসম্ভব, এমন দশায় বিদেশে নিতে নিদেনপক্ষে উড়জাহাজের বিজনেস ক্লাসে টিকিট করতেই হবে। জুলাইয়ে আহতদের চিকিৎসায় সরকারি বরাদ্দ আছে দেড়শো কোটি টাকা অথচ অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, দীপংরের তুরস্কাযাত্রা আটকে গেছে ইকোনমি ক্লাসে টিকিট কাটার কারণে। গুলিবিদ্ধ পায়ে এখন পচন ধরার উপক্রম।
দীপংকর বালা বলেন, ‘আমার পা রাখার জন্য চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ইনফেকশনের কারণে আমার পা কাটা লাগবে।’
দীপংকরের মতো জুলাই আন্দোলনে আহত প্রত্যেকেরই রয়েছে আলাদা আলাদা গল্প, ভিন্ন ভিন্ন ট্র্যাজেডি, যার নীরব সাক্ষী ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের ৬১৭ নম্বর কক্ষ। এই যেমন দিনের পর দিন দ্বারে দ্বারে ঘুরেও অর্থ সহায়তা পাননি ১৯ বছরের ইব্রাহিম। মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব পড়ছে হাজার হাজার জুলাই যোদ্ধার আহত জীবনে। ভবিষ্যতের চিন্তায় স্ট্রোকও করেছেন গুলিবিদ্ধ আলামিন। আন্দোলনের পর থেকে কোনো সমন্বয়কের দেখা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ তারা।
নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে ‘২৪- এ যারা জীবন দিলেন অকাতরে, স্বৈরাচারের বুলেটে আহত হলেন নির্মমভাবে সেসব বীরদের সম্মান নিশ্চিত করুক রাষ্ট্র। সুচিকিৎসা এবং অর্থ সহায়তা পেতে আহতরা অফিসে-অফিসে না ঘুরুক বরং সহায়তা পৌঁছাক বীরদের ঘরে– সেটাই চান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক।