গৃহবধূর গর্ভের সন্তানের দাবি করলো দুই যুবক

বরিশাল নগরীর ২৬নং ওয়ার্ড পশ্চিম হরিনাফুলিয়ার রজ্জব আলী হাজী বাড়িতে এক গৃহবধূর গর্ভের সন্তানের বাবা দাবিদার হয়েছে দুই যুবক। তারা হলেন- গৃহবধূর স্বামী ও চাচাতো দেবর। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তৎপর ওই এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল। ঘটনার শিকার দরিদ্র গৃহবধূ স্বামী সংসার সব হারিয়ে সন্ত্রাসীর হামলায় মারাত্বক জখম। এবং গর্ভস্থ ৫ মাসের শিশুকে নিয়ে স্বজনদের বাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছেন।

প্রায় ৮ বছর আগে পারিবারিকভাবে রজ্জব হাজীর স্বজন নুরুল হকের ছেলে দিনমজুর রুবেলের সাথে বিয়ে হয় ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দরিদ্র কৃষকের মেয়ের। বিয়ের পর থেকেই প্রতিবেশী চাচাতো দেবর নুরুল ইসলামের ছেলে সাইদুল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ভাবীকে উত্ত্যক্ত করতো এবং অনৈতিক প্রস্তাব দিতো।

এমনকি দেবরের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শারীরিকভাবেও তাকে নির্যাতন করতো দেবর সাইদুল। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় স্থানীয়ভাবে শালিস মীমাংশা হলেও দমে যায়নি সাইদুল।

ঘটনাচক্রে প্রায় ৬ মাস আগে বাড়ির পাশের এক স্বজনের মৃত্যু হলে সেই বাড়িতে রান্না করতে যায় ওই নারী। এসময় ওই ঘরে কেউ না থাকার সুযোগে পেছন থেকে তাকে জাপটে ধরে সাইদুল এবং তার পরা ওড়না দিয়ে হাত মুখ বেধে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ করে বলে জানান ধর্ষিতা। কিন্তু স্বামী এবং সামাজিকতার কথা চিন্তা করে বিষয়টি গোপন রাখে সে। এদিকে সে গর্ভবতী হয়ে পড়লে আবারও তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয় সাইদুল এবং গর্ভের সন্তান তার বলে দাবি করে।

নিরুপায় হয়ে বিষয়টি স্বামীকে জানালে স্বামী রুবেল সব কিছু মেনে নিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে থাকলে বাধা দেয় সাইদুল।

সাইদুল এলাকায় প্রচার করে বেড়ায় যে ওই নারীর গর্ভের সন্তান আমার। এতে করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ওই দম্পতি। গত ২৮ তারিখ এ নিয়ে এলাকায় প্রভাবশালীদের উপস্থিতিতে শালিস বৈঠক বসে এবং সেখানে অভিযুক্ত সাইফুলের মা হনুফা, খালা মরিয়ম এবং ভাই খায়রুল ওই নারীকে নষ্টা আখ্যা দিয়ে নির্যাতন করে এবং ঘর থেকে রাস্তায় বের করে দেয়।

সংবাদ পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ওই নারীকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন মামুনের কাছে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু দীর্ঘ আট ঘণ্টা থানা কম্পাউন্ডে অভুক্ত অবস্থায় থেকে রাত ৯টায় দেখা পান ওসির।

তিনি ঘটনা শুনে ভিকটিমকে অভিযোগ দাখিলের পরামর্শ দিলে ভিকটিম অভিযোগ দাখিল করেন। বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক থানায় অবস্থানরত সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামানের সাথে সংবাদকমীরা যোগাযোগ করলে তিনি ভিকটিমকে সর্বাত্বক সহযোগিতা প্রেরণের পাশাপাশি তদন্ত সাপেক্ষে মামলা গ্রহণের আশ্বাস দেন। অভিযোগটির তদন্তের দায়িত্ব পান এস আই সহিদুল ইসলাম। তিনি ঘটনার পরের দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমের সাথে কথা বলেন এবং থানায় হাজির হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

এদিকে, পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর পরই মাঠে নামে ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ আহম্মেদের নেতৃত্বে একটি চক্র। তারা ভিকটিমকে কৌশলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যেতে বাধা দেয় এবং গত ২ অক্টোবর সোমবার কাউন্সিলর ফরিদ আহম্মেদের নিজ বাড়িতে বসে মাত্র ৫ হাজার টাকায় বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা চালায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভিকটিমের এক স্বজন জানান, তাকে আমরা ধার দেনা করে গোপনে চিকিৎসা করাচ্ছি।

ডাক্তার বলেছেন, তার পেটে লাথি মারায় গর্ভের সন্তানের একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ওকে উন্নত চিকিৎসা করানো জরুরি প্রয়োজন।

কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি আরো বলেন, গরিব হয়েছি বিধায় আমাদের ইজ্জতের মূল্য মাত্র ৫ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, ০৪ অক্টোবর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/নীল