প্রাণঘাতী করোনার চেয়ে সড়কে বেশি মৃত্যু!

মহামারী করোনার ব্যাপক বিস্তার ঠেকাতে গত দেশে ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন চলছে। বন্ধ গণপরিবহন, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি। তবুও কমছে না করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। থামছে না মৃত্যুর মিছিল। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা আসে। ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ২২৮ জন। অথচ গত দুই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় এর চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, গত মার্চে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬ জন। আর এপ্রিলে মারা গেছেন ১৬২ জন। অথচ গত বছরের মার্চে ৩৮৪টি দুর্ঘটনায় ৪৬ নারী ও ৮২ শিশুসহ ৩৮৬ জন নিহত হন এবং আহত হন ৮২০ জন। এপ্রিলে ৩২৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হন ৩৪০ জন এবং আহত হন ৬১০ জন। নিহতদের মধ্যে ৩৮ জন নারী এবং ৫৩টি শিশু। আর মে মাসে ২৯৭টি দুর্ঘটনায় ৪৭ নারী ও ৪৪ শিশুসহ ৩৩৮ জন নিহত এবং ৫০৪ জন আহত হন। চলতি বছরের গত মাসে শুধু সড়ক দুর্ঘটনাতেই মারা গেছেন ২১১ জন। সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ এ প্রতিবেদককে জানান, পুলিশের তথ্যানুযায়ী আমাদের দেশে প্রতিদিন গড়ে এখন পর্যন্ত ৮-১০ জন মারা যান সড়ক দুর্ঘটনায়।

কিন্তু হাসপাতালসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এ মৃত্যুর গড় ১৫-১৬ জন। বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা থেকে সড়ক দুর্ঘটনার মৃত্যু দ্বিগুণের কাছাকাছি। রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৩৪০টি। নিহত হয়েছেন ৪৪৫ জন এবং আহত ৮৩৪ জন। ফেব্রুয়ারিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৮৭টি। নিহত ৪৬৩ এবং আহত ৯৪৮ জন। মার্চে ২৮৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪২৭ জন এবং আহত ৯৮৬ জন। এপ্রিলে দুর্ঘটনার সংখ্যা ১১৯টি। নিহত ১৩৮ এবং আহত ১১২ জন। গত বছর মোট দুর্ঘটনা ৪ হাজার ৬৯৩টি।

এতে নিহত হয়েছেন ৫ হাজার ২১১ জন এবং আহত হয়েছেন ৭ হাজার ১০৩ জন। অন্য একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত এক মাসে শুধু সড়ক দুর্ঘটনাতেই নিহত হয়েছেন ২১১ জন। আরও ২২৭ জন আহত হয়েছেন। একই সময় নৌপথে ৮টি দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত, ২ জন আহত এবং ২ জন নিখোঁজ হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, কোনো কিছুই থামাতে পারছে না সড়ক দুর্ঘটনা।

গত ২৬ মার্চ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশব্যাপী পরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হলেও লকডাউনের এক মাসে ২০১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাদের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, সর্বোচ্চ ৯৭টি দুর্ঘটনা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৬৩টি দুর্ঘটনা মোটরসাইকেল, ২৯টি ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ২৮টি নসিমন ও করিমন, ২২টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ১৭টি প্রাইভেট কার এবং একটি বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ এ সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৮৮ জন বেশি নিহত হয়েছেন। নৌ, রেল ও সড়ক পরিবহন সেক্টরে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ২১৯টি দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৬২৮ জন প্রাণ হারান এবং আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৬২১ জন। গত বছরের জানুয়ারিতে ৩৮৩টি দুর্ঘটনায় ৫৩ নারী ও ৭১ শিশুসহ ৪১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৭২৫ জন আহত হয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে ৪০১টি দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে ৪১৫ জন নিহত এবং ৮৮৪ জন আহত হন।

নিহতদের মধ্যে ৫৮ জন মহিলা ও ৬২টি শিশু। মার্চে ৩৮৪টি দুর্ঘটনায় ৪৬ নারী ও ৮২ শিশুসহ ৩৮৬ জন নিহত হন এবং আহত হন ৮২০ জন। এপ্রিলে ৩২৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হন ৩৪০ জন এবং আহত হন ৬১০ জন। নিহতদের মধ্যে ৩৮ জন নারী এবং ৫৩টি শিশু। মে মাসে ২৯৭টি দুর্ঘটনায় ৪৭ নারী ও ৪৪ শিশুসহ ৩৩৮ জন নিহত এবং ৫০৪ জন আহত হন। জুনে ৩৬৭টি দুর্ঘটনায় ৪৯ নারী ও ৬৯ শিশুসহ ৪৩৯ জন নিহত এবং ৮১৮ জন আহত হন। হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা সড়ক দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।