অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিমের এক হিসাবেই লেনদেন ৬১ কোটি টাকা

ক্যাসিনো কাণ্ড দিয়েই শুরু হয় দেশে শুদ্ধি অভিযান। অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট হিসেবেই পরিচিত সেলিম প্রধান। গুলশানসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় এই কারবার চালিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হয়ে এই জুয়াড়ি আছেন জেলহাজতে। পরে তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয় দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। এরপর দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধানের তদন্তে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য।

দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে সেলিম প্রধানের হিসাবে লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে অবাক হয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। একটি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় তার একটি সঞ্চয়ী হিসাবেই ১১ মাসে লেনদেন হয়েছে ৬১ কোটি টাকা। অন্যান্য ব্যাংকে তার নিজস্ব হিসাবগুলোতেও কোটি কোটি টাকার তথ্য মিলেছে। এ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট ১৩ কোটি টাকার তথ্য-প্রমাণ দুদক হাতে পেলেও কর্মকর্তারা মনে করছেন, বিভিন্ন ব্যাংকে জমা হওয়া সেলিম প্রধানের পুরো টাকাই কৌশলে থাইল্যান্ডে পাচার করা হয়েছে। পাচার হওয়া ওই টাকার পরিমাণ শত কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

দুদক সূত্র জানায়, মামলার পর তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার তদন্তের স্বার্থে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে সেলিম প্রধানের প্রায় অর্ধশত হিসাব জব্দ করেছেন। দেশের ৭৬টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। সেলিমের আয়কর নথিগুলোও জব্দ করেছে দুদক। দেশের বাইরে তার সম্পদের তথ্য পেতে জাপান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে চিঠি দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরই মধ্যে থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু তথ্য মিলেছে।

জানা গেছে, সেলিম প্রধানের থাইল্যান্ডে প্রধান গ্লোবাল ট্রেডিং, এশিয়া ইউনাইটেড এন্টারটেন্টমেন্টলি, তমা হোমপাতায়া কোং লিসহ সাতটি কোম্পানির রেকর্ডপত্র এখন দুদকের হাতে। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংক ও দ্য সায়েম কমার্শিয়াল ব্যাংকে সেলিমের ২০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া থাইল্যান্ডে এই ক্যাসিনো সম্রাটের বিভিন্ন কোম্পানিতে আশিক আহমেদ ও এস এস হোসাইন নামে দুই বাংলাদেশি পার্টনারের যুক্ত থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক।

তদন্ত কর্মকর্তা এরই মধ্যে সেলিম প্রধানের থাইল্যান্ডের ব্যাংক হিসাব ও কোম্পানির রেকর্ডপত্র জব্দের জন্য এমএলএআর (পারস্পরিক সহযোগিতা চুক্তি) করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও এমএলএআর করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে সেলিম প্রধানের ক্যাসিনো খেলা এবং সেখান থেকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ক্যাসিনো চিপস ও ক্যাসিনো যন্ত্রপাতি কেনার তথ্য তদন্তে উঠে এসেছে।

দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশে মূলত কোরিয়ান এক ব্যবসায়িক পার্টনারের মাধ্যমে সেলিম প্রধান অনলাইন ক্যাসিনো কারবার শুরু করেন। আর এই কারবার আড়াল করতে রাজধানীর গুলশানে প্রধান স্পা সেন্টার, প্রধান টেক্সটাইলসহ ছোটখাটো কিছু ব্যবসা চালান।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের একটি সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া সেলিম প্রধান বেড়ে ওঠেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে। অল্প বয়সেই চলে যান জাপানে। সেখানে টানা ৯ বছর থাকার পর ব্যবসায়িক প্রতারণার কারণে তাকে জাপান ছাড়তে হয়। এরপর কৌশলে চলে চান যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে। সেখানেই মূলত তার অনলাইন ক্যাসিনো খেলার হাতেখড়ি।

চুরির দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হন তিনি। ছাড়া পেয়ে একের পর এক জালিয়াতি আর প্রতারণার পাশাপাশি চলতে থাকে তার অনলাইন ক্যাসিনো কারবার। জালিয়াতির অভিযোগে ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ ছাড়া জেপি মরগান চেস ব্যাংকে সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে অবৈধ লেনদেনের তথ্য রয়েছে।