রাজধানীর হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভুঁইয়া হত্যার নেপথ্যে রুপা নামে আশ্রয়প্রার্থী ওই নারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে মহিদুল ইসলাম বলেন, কলেজটির সাবেক উপাধ্যক্ষ সাইফুর রহমান ভুঁইয়া হত্যার ঘটনায় ফরিদপুর থেকে অভিযুক্ত রুপা ও নাজিম দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্ত রুপাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টাকালে আত্মরক্ষার জন্য সাইফুর রহমানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেন নাজিম। পরে বাথরুমে আটকে রেখে পালিয়ে যান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে মো. মুহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ঘটনাক্রমে কমলাপুর রেলস্টেশনে সাইফুর রহমানের সাথে পরিচয় হয় তাদের। অসহায়ত্বের কারণে ওই দম্পতিকে বাসায় এনে আশ্রয় দেন সাইফুর। এরপর থেকেই রুপাকে বিভিন্নভাবে শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেন সাইফুর রহমান। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানান। পরে এ দম্পতিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে
পুলিশ জানায়, নাজিম হোসেন ও রুপা বেগম দম্পতিকে চাকরি দেয়ার কথা বলে বাসায় নিয়ে অসদাচরণ ও নাজিমের অনুপস্থিতিতে আপত্তিকর আচরণ’ ও স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতেন সাইফুর রহমান। সবশেষে গত রোববার (৯ মার্চ) রাতে তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টা করলে তার স্বামী প্রতিবাদ করেন। এসময় ধস্তাধস্তি হয় তাদের মধ্যে। একপর্যায়ে বঁটি দিয়ে সাইফুর রহমানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যান ওই দম্পতি। সোমবার সকালে রাজধানীর উত্তরার উত্তরখান থানা এলাকার পুরানপাড়ার একটি বাসা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাকে। এরপর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হলে চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উদঘাটনে নামে পুলিশ। পরে ১১ মার্চ ফরিদপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়।
নাজিম হোসেন (২১) ও রুপা বেগম ওরফে জান্নাতি (২৩) এর কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি চাবির রিং ও একটি ব্যাংকের ভিসা কার্ড উদ্ধার করা হয়।
এর আগে নিহতের ফ্ল্যাট থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো বঁটি, একটি ধারালো চাকু ও রক্তমাখা জামা-কাপড় এবং বিছানার চাদর উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। এ খুনের ঘটনায় তার ছোট ভাই মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ভুঁইয়া বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় ১১ মার্চ একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে নিহতের ভাই উল্লেখ করেন, নিহত সাইফুর উত্তরখানের পুরানপাড়া বাতান এলাকায় তার স্ত্রীর পৈত্রিক আড়াই শতক সম্পত্তিতে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য গত ৩-৪ মাস ধরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। যেখানে ঘটনাস্থল তার সামনেই এ জায়গাটি।
নিহত সাইফুর রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রীর কোনো বিরোধ ছিল কি না জানেত চাইলে উত্তরা বিভাগের ডিসি মহিদুল ইসলাম বলেন, থাকতে পারে। তদন্তের জন্য তার স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে সে ধরনের কোনো তথ্য আমরা পায়নি।
মেয়েটিকে ধর্ষণচেষ্টার কারণে এ দম্পতি সাইফুর রহমানকে হত্যা করেছে মামলাটি কোন পর্যায়ে যাবে- এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, নিশ্চিতভাবে এটি হত্যা মামলা। আদালতে মামলাটি যখন ট্রায়াল হবে, তখন আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যে পরবর্তীতে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।