তিন বছর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা, বিয়েতে অস্বীকার

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিয়ের আশ্বাসে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই কলেজছাত্রী বাদী হয়ে সখীপুর থানায় ধর্ষণ মামলা করেছেন।

বিষয়টি মিমাংসার জন্য বুধবার সকালে সখীপুর পৌরসভার নিকাহ্ রেজিস্ট্রার (কাজি) শফিউল ইসলাম ওরফে কাজি বাদলের কার্যালয়ে সালিশি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মেয়েটি স্থানীয় একটি কলেজের স্নাতক শ্রেণির প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

এ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিয়ের দাবিতে ওই কলেজছাত্রী প্রেমিক শাহিন খানের বাড়িতে অনশন শুরু করেন। অনশন অবস্থায় বুধবার রাতে ওই ছাত্রীকে শাহিনের পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে বেড় করে দিতে ব্যাপক মারধর করে। পরে মেয়েটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

মামলার বাদী ও সালিশি বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এসডিএস মোড় এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী ওরফে জাকু খানের ছেলে শাহিন খানের সঙ্গে জাকু খানের ছোট ভায়রা খোরশেদ আলমের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ের বিয়ের সিদ্ধান্ত হয়। শাহীন খানের পরিবার মেয়েটিকে তাদের ছেলের বউ হিসেবে মেনেও নেয়। ওই সময় মেয়েটির বিয়ের বয়স ১৮ না হওয়ায় তাদের বিয়েটি রেজিস্ট্রি (কাবিন) করা হয়নি বলে জানান তারা। এরপর থেকেই শাহীন খান ও মেয়েটির মধ্যে প্রথমে প্রেম ও পরে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই মেলামেশা করেছেন। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক নিয়ে শাহীনের অনেক স্বজনের বাড়িতেও গেছেন তারা। শাহীন খানের বাবা লিয়াকত হোসেন খান ওরফে জাকু খান তাকে তার ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিয়েছেন বলেও জানান অভিযোগকারী মেয়েটি।

গত মাসে বিয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ায় শাহিন ও মেয়েটি বিয়ের প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনাকালে উভয় পরিবারের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। পরে পরিবারের সিদ্ধান্তে শাহীন ওই মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে গ্রাম্য সালিশে তাদের পূর্বের সব সম্পর্কই অস্বীকার করে শাহীনের পরিবার। এ নিয়ে ওই বৈঠকে তাদের অপমান করা হয়েছে বলেও জানান মেয়েটি। এর ফলে তারা ওই সালিশি বৈঠক ত্যাগ করেন। অভিমানে মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিয়ের দাবিতে সে তার হবু বর শাহিন খানের বাড়িতে অনশন শুরু করেন। অনশন অবস্থায় বুধবার রাতে তাকে শাহিনের পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে বের করে দিতে ব্যাপক মারধর করেন। এ সময় সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত শাহীন খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সখীপুর পৌরসভার নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) ও উপজেলা কাজি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিউল ইসলাম বাদল সালিশি বৈঠকের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি মিমাংসার জন্য বসা হলেও দুই পক্ষ বিপরীত অবস্থানে থাকায় সমাধান করা সম্ভব হয়নি। ওই বৈঠকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুতুব উদ্দিনসহ স্থানীয় মাতব্বররা উপস্থিত ছিলেন।

শাহীন খানের বাবা লিয়াকত আলী খান ওরফে জাকু খান জানান, আমার ছেলের বিরুদ্ধে আনা ধর্ষণের অভিযোগ সত্য নয়। ওই মেয়েটি শাহীনের বউ দাবি করে আমার বাড়ি ওঠে বসেছিল। তাই তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সখীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকছুদুল আলম বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্ত শাহীন খান পলাতক থাকায় এখনও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/সাদ