ব্লু হোয়েল নয়, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়ে স্বর্ণার আত্মহত্যা

রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডে গত ৫ অক্টোবর ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা। ইন্টারনেটে আসক্ত হওয়ার কারণে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, ব্লু হোয়েল গেমের নির্দেশনায় সে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে স্বর্ণার ব্লু হোয়েল গেম খেলার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, ব্লু হোয়েল নয় অন্য কোনো ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়ে স্বর্ণা আত্মহত্যা করেছে।

স্বর্ণার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করেছে কাউন্টার টেররিজমের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম (সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং) বিভাগ।

এ বিষয়ে সাইবার ক্রাইমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘স্বর্ণার ব্যবহৃত কম্পিউটারটি নষ্ট। তার স্মার্টফোন এনে টেস্ট করে ব্লু হোয়েল গেম খেলার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তার মৃত্যুর কারণ যাই হোক, ব্লু হোয়েল নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্লু হোয়েল গেমটি যদি তার মোবাইল থেকে আন-ইনস্টলও করা হয় তবুও গেমটি খেলার কোনো না কোনো চিহ্ন বা আলামত থাকবে। সেটি ফরেনসিকে উঠে আসার কথা ছিল।’

আত্মহত্যার কয়েকদিন আগে স্বর্ণা রকমারি ডটকমের মাধ্যমে অনেকগুলো ভূতের বই কিনেছিল। ভূতের বই পড়ত সে। কিন্তু তার মধ্যে ব্লু হোয়েল খেলার কোনো আলামত দেখেনি পরিবার।

সুইসাইডাল নোটে স্বর্ণা লিখেছিল, ‘নো ওয়ান রেসপনসিবল ফর মাই ডেথ। এরপর সে একটি ইমো এঁকেছিল; যেটি মুখের অবয়ব, এক চোখ মাত্রাতিরিক্ত ছোট।

এ দিকে স্বর্ণার মৃত্যুর পর সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে পুলিশ। প্রতিবেদনে শরীরের কোথাও ব্লু হোয়েল গেমের চিহ্নের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তার পায়ে শুধু একটি কাটার দাগ ছিল। তাও এটি প্রায় মাস খানেক আগের হতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্বর্ণার আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবার পক্ষ থেকে কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) বা মামলা করা হয়নি।

এ বিষয়ে নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, আমরা স্বর্ণার আত্মহত্যার বিষয়টি তদন্ত করছি। তদন্তে তার সুইসাইডাল নোটের সঙ্গে হাতের লেখার মিল পাওয়া গেছে। তবে ব্লু হোয়েল বা অন্য কোনো গেমের নির্দেশনায় সে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রমাণ মেলেনি।

মেধাবী ছাত্রী ছিল অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা। রাজধানীর ওয়াইডব্লিউসিএ হায়ার সেকেন্ডারি গার্লস স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিল। সেখানে সব সময় মেধা তালিকায় প্রথম ছিল সে। এর পর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় হলিক্রস স্কুলে। গত ৫ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডির সেন্ট্রাল রোডের ৪৪ নম্বর বাসার ৫বি ফ্ল্যাটের বাসা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। অনেক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে ব্লু হোয়েল গেমের নির্দেশনায় স্বর্ণার মৃত্যু হয়েছে এবং স্বর্ণা বাংলাদেশে প্রথম ব্লু হোয়েল গেমের শিকার বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু কোনো দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি।

প্রসঙ্গত, শুধু বাংলাদেশ নয় বর্তমানে সারা বিশ্বে ব্লু হোয়েল গেমের এই রহস্যময় ধারণাটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন আত্মহত্যার ঘটনায় খোঁজা হচ্ছে ব্লু হোয়েল গেমের সম্পৃক্ততা। কিন্তু বিভিন্ন দেশের পুলিশি তদন্ত ও গবেষকরা- এ সব আত্মহত্যার ঘটনায় কোনো ধরনের গেমের অস্তিত্ব পাননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/নীল

Scroll to Top