স্ত্রীর সন্তান হওয়ায় বিচ্ছেদ ঘোষণা ৮০ বছরের বৃদ্ধের

৮০ বছরের এক বৃদ্ধের বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণায় তোলপাড় চলছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায়। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ‘শখ’ করে দ্বিতীয় বিয়ে করলেও সেটা ১২ বছরের মাথায় বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন ৮০ বছরের ওই বৃদ্ধ। ওই স্ত্রীর বয়স এখন ৩২। একটি সন্তান জন্ম দেওয়ার পর থেকে পারিবারিক কলহের জের ধরে ১ নভেম্বর বুধবার দুপুরে ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পিলকুনি পূর্ব পাড়া গ্রামে শালিশী বৈঠকে ওই ঘোষণা আসে।

শালিশের প্রধান স্থানীয় ইউপি সদস্য মন্টু মেম্বার জানান, আশি বছর বয়সের বৃদ্ধ দয়াল মিয়ার প্রথম স্ত্রী ১৮ বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। প্রথম ওই সংসারে দয়াল মিয়ার ৩ ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে। তার ওই ৫জন ছেলে মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের সংসারেও সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর ৬ বছর ১২ বছর পূর্বে ফতুল্লা রেলস্টেশন এলাকায় শেফালী বেগম (৩২) নামে যুবতীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাদের একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয়। শেফালী ওই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্রে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে স্থানীয় একটি টেক্সটাইল মিলে কাজ করছে। সম্প্রতি শেফালী আরেকটি পুত্র সন্তান প্রসব করে। সন্তান হওয়ার তিন দিন পরই কাউকে কিছু না জানিয়ে অন্যত্রে সন্তানটি দত্তক দিয়ে দেয়। বিষয়টি দয়াল মিয়া জানতে পেরে শেফালীকে জিজ্ঞেস করলে এনিয়ে দুজনের মধ্যে তর্ক হয়। পরে দয়াল মিয়া ওই সন্তান অবৈধ দাবী করে শালিশ ডাকেন।

মন্টু মেম্বার আরো জানান, শালিশে সকলের সম্মতিতে বলা হয় যেহেতু তাদের বিয়ের কাবিন নেই মুন্সি দিয়ে বিয়ে হয়েছে। সেহেতু শেফালীকে দেনমোহর বাবদ ৯ হাজার টাকা দিয়ে দিবেন দয়াল মিয়া। আর তাদের প্রথম সন্তান আহাদ আলী (৮) এখন স্থানীয় পিলকুনি প্রাইমারী স্কুলে তৃতীয় শ্রেনীতে পড়েন। তার ভরন পোষন বাবদ মাসে এক হাজার টাকা করে দয়াল মিয়া দিয়ে যাবে। দয়াল মিয়া বর্তমানে কোন কাজ কর্ম করেনা।

দয়াল মিয়া জানান, বয়সের ভারে আমি এখন প্রায় সময় অসুস্থ হয়ে থাকি। কোন কাজ কর্ম করিনা। নিজের সেবা যত্নের জন্যই বিয়ে করে ছিলাম। শেফালী ১৫দিন পূর্বে পুত্র সন্তান প্রসব করেছে। আমি জানি না। যখন শুনছি তখন তাকে জিজ্ঞেস করলে সে অস্বীকার করেন। পরে স্বীকার করে সে বলেন সন্তানের বাবা নাকি আমি। আমার সন্তান হলে সেতো আমাকে জানাবে। না জানিয়ে আবার অন্যত্রে পালকও দিয়ে দিয়েছে। সে কয়েক বছর হয় আমার সাথে বসবাস করে না। পিলকুনি পশ্চিপাড়া রওশন আরার বাড়িতে ভাড়া থেকে একটি টেক্সটাইল মিলে কাজ করে। তার চরিত্র নিয়ে অনেকে আমার সামনে সমালোচনা করে।

শেফালী বেগম জানান, আমার সন্তান বৈধ। আমার সন্তানের বাবা আমার স্বামী দয়াল মিয়া। আমার চরিত্র সম্পর্কে আমার আশপাশের বাড়ির সকলে জানে। চরিত্রহীনা হলে ভদ্র মানুষের বাড়িতে ভাড়া থাকতে পারতাম না। এক সন্তান নিয়ে কোন মতে বেচে আছি। এরমধ্যে স্বামীর উত্যক্ততায় আরেকটি সন্তান হয়েছে। ভরন পোষন করতে পারবো না তাই এক শিক্ষক দম্পতির কাছে সন্তানটি দত্তক দিয়েছি। আমি বিচ্ছেদ মানিনা। আমার প্রথম সন্তানকে বসবাসের জন্য তার বাবার বসত বাড়িতে এক চিমটি হলেও জমি লিখে দিতে হবে। আমি যতদিন বেচে থাকবো কষ্ট হলেও ছেলেকে লেখা পড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, ০২  নভেম্বর  ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস পি