আম্পান: নদ-নদীতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে জোয়ার প্রবাহিত হচ্ছে

আজ বুধবার সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ঝোড়ো আবহাওয়া বিরাজ করছে। বুধবার সকালে মোংলা ও পায়রা বন্দরকে ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেত জারির পর সকাল থেকেই বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর দমকা হাওয়া বইছে।

বরিশালে মঙ্গলবার রাত থেকে লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করে। বুধবার সকাল পর্যন্ত বরিশালের ১০ উপজেলায় অন্তত দেড় লাখ লোক আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বরগুনা জেলার প্রত্যন্ত এলাকার লোকজনের আশ্রয়কেন্দ্র যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ কম। ঝড়ের প্রভাবে নদ-নদীতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে জোয়ার প্রবাহিত হচ্ছে। বরগুনার তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে কয়েকটি গ্রামে। বেশ কয়েকটি স্থানের বাঁধ ঝুঁকিতে থাকায় ওসব এলাকার লোকজন আতঙ্কে আছেন।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের নদী-নদী পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের ৩-৪ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ার বইছে। জোয়ারের তোড়ে বরগুনা সদর উপজেলার মাইঠা এলাকার বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে আশপাশের সাইঠা, রায়েরতবক, বড় লবণগোলা গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। বুধবার সকালে পায়রা নদীর অধিক উচ্চতার জোয়ারে এই বাঁধের অন্তত ২০ ফুট অংশ জুড়ে ভেঙে বিলীন হয়। এখানে নতুন একটি স্লুইস নির্মাণ করা হচ্ছে। এই স্লুইসের দুপাশের বাঁধ ভেঙে যায়। সকাল ৬টার দিকে বাঁধ ভেঙে গিয়ে পানি ঢুকতে থাকলে এসব গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়।

মাইঠা এলাকার বাসিন্দা বাদল পঞ্চায়েত বলেন, পানি ঢুকে পড়ায় এলাকার রবি ফসল খেত এরই মধ্যে প্লাবিত হয়ে গেছে। এখনো পানি ঢুকছে। এভাবে চলতে থাকলে এলাকার ঘরদোরে পানি ঢুকে পড়বে। এতে এলাকার কয়েক হাজার পরিবারকে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে পড়তে হবে।

বরগুনা সদরের ফুলঝুঁরি এলাকায় বুধবার সকালে নদীর পানি উপচে বাঁধের ওপর দিয়ে গ্রামে ঢুকে পড়ায় ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকার বাসিন্দা কলেজছাত্র সাইফুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে থেকে বিষখালী নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে তা বাঁধ উপচে ভেতর ঢুকে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ছে।

হেলার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া-জয়ালভাঙা এলাকার সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধের এক কিলোমিটার নাজুক অবস্থায় থাকায় সেখানের বাসিন্দারাও আতঙ্কে আছেন। স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, পায়রা নদীতে এরই মধ্যে তিন থেকে চার ফুট পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বেড়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও দমকা বাতাস বইছে। যে অবস্থা তাতে পানি আরও বাড়বে। পানি বাড়ছে এই বাঁধ কোনোভাবেই টিকবে না। বাঁধটি ভেঙে গেরে পুরো নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন প্লাবিত হবে। ঘরদোর পানিতে ভেসে যাবে।

পাউবোর বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আলম বলেন, ‘এসব এলাকায় আমাদের প্রকৌশলী ও কারিগরি দল কাজ করছে। আরও কোথায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ আছে সেগুলোও আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদ-নদীতে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বরগুনা কার্যালয়ের পানি পরিমাপক মাহতাব হোসেন বুধবার দুপুরে বলেন, বরগুনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর নদ-নদীতে বুধবার সকালে পুরো জোয়ার আসার আগেই বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। বরিশাল কার্যালয়ের পানি পরিমাপক আবদুর রহমান বলেন, কীর্তনখোলা বুধবার ১২টায় পুরো জোয়ার আসার আগেই স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

বরিশাল আবহাওয়া বিভাগের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলের নদ-নদী ও নিম্নাঞ্চল ৮ থেকে ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এ জন্য এসব এলাকায় বসবাসকারীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।