কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি ফতুল্লার লক্ষাধিক মানুষ

এই প্রাণঘাতী করোনার দুঃসময়েও দুর্ভোগে আছে ফতুল্লা ইউনিয়নের ৬টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। প্রায় একমাস ধরে কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় কষ্টভোগ করতে হচ্ছে তাদের। এই ইউনিয়নের লালপুর, পৌষারপুকুপাড়, আলমবাগ, পাকিস্তানখাদ টাগারপাড়, গাবতলী গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ একমাস ধরে পানিতে তলিয়ে আছে। অথচ ডিএনডি বাঁধের ভেতরে হলেও প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি এলাকাটি। টানা বৃষ্টি আর ডাইংসহ শিল্প কারখানার বর্জ্য এই জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জলাবদ্ধতার ফলে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পয়ঃনিস্কাশনের পানি, ক্যামিকেলের পানি মিলে মিশে একাকার হয়ে জনজীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। জলাবদ্ধতার কারণে ঘরে ঘরে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধরা এই কষ্টের শিকার হচ্ছে বেশী। নোংরা, পচা, ময়লা, ক্যামিকেল ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি মাড়ানোর কারণে অনেকেরই দেখা দিয়েছে চর্মরোগ ও চুলকানি।

পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় ফতুল্লা-লালপুর-পৌষারপুকুরপাড়-পাকিস্তানখাদ ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি তলিয়ে গিয়ে সেখানে এখন হরহামেশাই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। রাস্তার জায়গায় জায়গায় পানির নীচে লুকানো খানাখন্দ তৈরি হওয়ায় দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে পথচারী, রিকশাযাত্রী ও চালকরা। কোনো কোনো এলাকায় পানি উপচে রাস্তা ও বাসা বাড়িতে ঢুকে গেছে। ড্রেনের নোংরা পানি ও মলমূত্রের সাথে যোগ হয়েছে শিল্প-কারখানার কেমিক্যালযুক্ত বিষাক্ত পানি। অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে নোংরা ও ডাইং কলখারখানার গরম পানিতে। রাতে রাস্তা খুঁজে পাওয়া কঠিন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে অফিসগামী, মুসল্লি, দোকানিসহ পানিবন্দি প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

লালপুর এলাকার বাসিন্দা নীল রতন দাস (৬২) জানান, এই এলাকায় জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী আজাদ ডাইংসহ আরো কয়েকটি ডাইং। করোনার এই মহামারীতে এমনিতেই আমরা দুর্বিসহ জীবন যাপন করছি। তার উপর এই জলাবদ্ধতা আমাদের জীবনকে আরো বিষিয়ে তুলেছে।

পৌষারপুকুরপাড় এলাকার গৃহিনী রেহেনা আক্তার (৩২) বলেন, পানির সাথে মলমূত্র ও শিল্প-কারখানার কেমিক্যালযুক্ত বিষাক্ত পানি মিশে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে শত শত মানুষ। ময়লা পানি বিশেষ করে যাদের একতলা ও নিচতলায় বাড়ি সেখানে ঢুকে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। রান্নাসহ নানা কাজ কর্মে সমস্যা হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে পানির পাম্প ছাড়া উপায় নেই, কারণ এলাকা নিচু হওয়ায় ড্রেনগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধাতার জন্য দায়ী ডাংই ফ্যাক্টরি মালিকদের বার বার নিষেধ করার পরও তারা ক্যামিকেলযুক্ত পানি এলাকায় ছাড়ছে। আমরা ডায়িংগুলোর মালিকদের নোটিশ করছি, জানাচ্ছি তবে তারা কেউ গায়েই মাখছে না।

তিনি আরো জানান, এলাকাটি ডিএনডির ভিতরে হওয়ায় বিষয়টি আমরা স্থানীয় এমপি ও ডিএনডি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এলাকাটি ডিএনডি প্রকল্পের আওতায় নিলে এটার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। ফতুল্লা ইউনিয়নের ওই এলাকাগুলি যেন ডিএনডি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় আনা আনা হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।