দীর্ঘ ৩৭ বছর পর শহীদ মিনার পেয়ে খুশিতে আত্মহারা ছাত্র-ছাত্রীরা

টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলার দুর্গম চরে প্রতিষ্ঠিত গাবসারা দাখিল মাদ্রাসায় পাকা শহীদ মিনার নির্মিত হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা খুশিতে আত্মহারা। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ৩৭ বছর পর নিজস্ব অর্থায়নে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

কলাগাছ আর ব্রেঞ্চ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে প্রতি বছর পালন করা হতো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস। পাকা ও স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মিত হওয়ায় ফুল দিয়ে এবারই প্রথম ২১ শে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করতে পারবে মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা।

১৯৮৪ সালে যমুনা নদীর দুর্গম চরের মধ্যে দাখিল এ মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয়। টাঙ্গাইল শহর থেকে ৩১ কিলোমিটার দূর গোবিন্দাসী ঘাট। এরপর নৌকা যোগে প্রায় ২০ মিনিট যাবার পর যমুনা নদীর পুংলীপাড়া ঘাট। তারপর কমপক্ষে ১৫ মিনিট বালু চরে পায়ে হেঁটে মাদ্রাসাটির অবস্থান।

৭৫ শতাংশ জমির উপর নির্মিত মাদ্রাসাটির ইবতেদায়ী থেকে দাখিল পর্যন্ত বর্তমানে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৪০২ জন। শিক্ষক কর্মচারীসহ স্টাফ ১৫ জন। উপজেলা চরাঞ্চলের অতি সাধারণ মানুষের সন্তানদের এ প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ব্যাপক সুনাম রয়েছে। প্রতি বছর টিন ও কাঠ দিয়ে ছোট্র করে শহীদ মিনার বানিয়ে সেটি বেঞ্জ বা চেয়ারের উপর রেখে ফুল দেওয়া হতো। তাই ছাত্রছাত্রীদের দীর্ঘদিনের জোরালো দাবি ছিল একটি স্থায়ী নতুন শহীদ মিনারের।

মাদ্রাসার সুপার আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস পালন করতে হবে। এছাড়াও, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদেরও অনেক দিনের দাবির জন্যই স্থায়ী শহীদ মিনার তৈরী করা হয়েছে। তাই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করেছি। দূর বাজার থেকে এখানে ইট, রড়, সিমেন্ট নিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব ছিল।’

মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আসিফ সরকার, আমিনুল হক, রাজিব ও সাথী আক্তার জানায়, ‘এবার নিজেদের মাদ্রাসায় নতুন পাকা শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারবো। সত্যি আমাদের খুব আনন্দ লাগছে।’ এদিকে, জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম বলেন, ‘জেলার ১২টি উপজেলায় আমাদের ৯৮৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৮৩টি তে শহীদ মিনার নেই। মাত্র ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একেবারে নতুন শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে।’

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক আতাউল গণি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে জানাতে এবং সবাইকে চেতনায় উজ্জীবিত করতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা উচিত। করোনা প্রভাব দূর হলে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর কর্তৃপক্ষকে শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য অনুরোধ করা হবে। প্রয়োজনে আমরা আর্থিক সহযোগিতা করবো।’

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসে প্রথম শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে গাবসারা দাখিল মাদ্রাসায় শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হবে।