সম্পত্তি লিখে নিয়ে বৃদ্ধা মাকে মারধর, বাড়ি ছাড়া করলেন নিজ ছেলেরা

এই সুন্দর পৃথিবীতে এমন অনেক অপ্রিয় ঘটনা ঘটে যা কাঁদিয়ে তোলে মানব হৃদয়কে। সম্পত্তি লিখে নিয়ে ৮০ বছরের অসুস্থ বৃদ্ধা মা আয়েশা বেওয়াকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন তিন ছেলে ও তাদের সন্তানরা। পরে আশপাশের লোকজন নির্যাতনের শিকার ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।

সোমবার (২২ মার্চ) এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের চকধুলি গ্রামে। ঘটনাটি জানিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

শেরপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধা আয়েশা বেওয়া জানান, বেশকিছুদিন আগে স্বামী মহির উদ্দিন প্রামাণিক মারা যান। এরপর বসতবাড়িসহ মোট ৬০ শতক জমির মালিক হন তিনি। ভরণপোষণের আশ্বাস দিয়ে ওই সম্পত্তি লিখে নেন তার ছেলে আল মাহমুদ মালু, শাহ আলী ও আবু হানিফ। কিছুদিন পর তাকে ভরণপোষণ দেওয়া বন্ধ করে দেয় তারা। এমনকি চিকিৎসার টাকাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব কাজের প্রতিবাদ জানান সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত ওই বৃদ্ধার চার মেয়ে ও জামাইরা। এরমধ্যে দুই মেয়েকে বাড়িতেই বিয়ে দিয়ে ঘর জামাই রাখা হয়। কিন্তু ভাইদের এসব কাজের প্রতিবাদ করার কারণে মেয়ে ও জামাইদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তার ছেলেরা। এরই ধারাবাহিকতায় ঘর জামাই থাকা দুই মেয়ে ও জামাইদের উচ্ছেদ করার ঘোষণা দেন। তাই বিষয়টি নিয়ে গ্রাম্য সালিশী বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু কারো কোনো কথাই মানতে নারাজ তাঁর ছেলেরা। তাই গ্রামের মাতব্বরদের পরামর্শে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।

বৃদ্ধা আয়েশা বেওয়া আরও বলেন, ভরণপোষণ ও চিকিৎসার কথা বলে সম্পত্তি লিখে নিলেও এখন সবকিছুই দেওয়া বন্ধ দিয়েছে। এমনকি আমাকে বাড়ি থেকেও বের হয়ে যাওয়ার জন্য বলছে। তাই তাদের নামে দেওয়া সম্পত্তি আমি ফিরিয়ে নিতে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সোমবার সকালের দিকে ঘর জামাই থাকা মেয়েদের উচ্ছেদ করার জন্য টিনের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে তিন ছেলে ও তাদের সন্তানরা। আমি নিষেধ করায় আমাকেও জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেয় তারা।

তবে মারধরের কথা অস্বীকার করে ছেলে আল মাহমুদ মালু বলেন, তার মা বোনদের পাল্লায় পড়েছেন। এমনকি তাদের কু-পরামর্শে আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। এনিয়ে ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে মাত্র। এছাড়া বৃদ্বা মায়ের ভরণপোষণ ও চিকিৎসার ব্যাপারটি এড়িয়ে যান তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর থানার দায়িত্বে থাকা (ডিউটি অফিসার) পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক নয়ন চন্দ্র উক্ত ঘটনায় অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আহত ও অসুস্থ বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগটি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।