বেতনের বদলে চিনি!

পাবনা সুগার মিলে (চিনিকল) বর্তমানে অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে ছয় হাজার ২০০ টন চিনি। মিল রেট অনুযায়ী এ চিনির দাম প্রায় ৩১ কোটি টাকা। দীর্ঘদিন ধরে এই চিনি বিক্রি না হওয়ায় প্রতি মাসে প্রায় ৭০০ শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তার বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে মিল কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বেতন বাবদ টাকার বদলে চিনি দেওয়ার নিয়ম চালু করেছেন তারা।

নেওয়া হয়েছে ‘বেতনের বদলে চিনি’ দেওয়ার ব্যবস্থা। তবে এ ব্যবস্থায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। কেননা বেতন বাবদ তারা মিল রেটে চিনি পেলেও তাদের এই চিনি বাইরে বিক্রি করতে হচ্ছে ১২ শতাংশ কম দামে। এতে প্রতি মাসে বেতন থেকে তাদের গচ্চা দিতে হচ্ছে প্রায় ১৮ লাখ টাকা। এ বিষয়ে মিল কর্তৃপক্ষ ও সিবিএ নেতারা বলছেন, চিনি বিক্রি না হওয়ার কারণে বেতন দিতে না পারায় বাধ্য হয়ে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এটি স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নয়।

এদিকে প্রতি মাসে বেতন থেকে ১২ শতাংশ টাকা কম পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। তবে বেতন একেবারে না পাওয়ার চেয়ে কম পাওয়া ভালো বলেও মন্তব্য অনেকের। গতকাল সোমবার পাবনা সুগার মিলে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। মিলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মো. জামাল হোসেন বলেন, প্রতি মাসে মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বাবদ মৌসুমে প্রায় দেড় কোটি টাকা এবং অন্য সময়ে এক কোটি টাকার কিছু বেশি অর্থের প্রয়োজন পড়ে। মিলে চিনি বিক্রি না হওয়ায় সময়মতো বেতন দেওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জন্য ‘চিনি বিক্রি করে বেতন গ্রহণ করার বিধান করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মিল রেট (৫০ টাকা কেজি) থেকেও কম দামে চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে। এ কারণে প্রত্যেকে বেতনের টাকা থেকে ১২ শতাংশ পরিমাণ টাকা কম পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফউজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ফেডারেশনের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের সম্মতিতেই ‘বেতনের বদলে চিনি’- এ ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাহিদ আলী আনসারী বলেন, বেসরকারি মিল ও আমদানি করা চিনির দামের সঙ্গে পার্থক্য থাকায় তাদের সুগার মিলের চিনি বিক্রি হচ্ছে না। ফলে সময়মতো বেতন দেওয়াও সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের বলা হয়েছে নিজ উদ্যোগে চিনি বিক্রি করে বেতন গ্রহণ করতে। তবে এ ব্যবস্থা স্থায়ী নয়। এমডি বলেন, তার নিজেরও টাকার প্রয়োজন পড়লে মিল থেকে ৫০ টাকা রেটে চিনি কিনে বাইরে আরও কম দামে বিক্রি করেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, এর আগে মাসের পর মাস বিভিন্ন সুগার মিলে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হতো না। এখন তারা প্রতি মাসে কিছু টাকা কম পেলেও নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। আবার মিলের চিনিও তারা বিক্রি করছেন। সৌজন্যেঃ সমকাল