বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কা পতন শেয়ারবাজারে

বিশ্ব অর্থনীতিতে ভয়াবহ মন্দা ধেয়ে আসছে— এমনই আশঙ্কা আর্থিক খাতসংশ্লিষ্টদের। বেশ কিছুদিন ধরে এই শঙ্কা বিশ্ব বাণিজ্যে অন্যতম আলোচ্য বিষয়। চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব—এই আশঙ্কাকে আরো তীব্রতর করেছে। চীনা পণ্যে ট্রাম্পের শুল্কারোপের বিরুদ্ধে পালটা শুল্কারোপের হুমকি রয়েছে চীনের। এরইমধ্যে গতকাল শেয়ারবাজারে বড়ো দরপতন ঘটে গেছে। আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও এর প্রধান নির্বাহীরা আগামী দিনে সম্ভাব্য মন্দার মোকাবিলা করবেন কীভাবে— তা নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন।

এদিকে, মন্দার শঙ্কা আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নী সংস্থাগুলোর কাছ থেকেও আসছে। অবাক বিষয় যে, বড়ো পাঁচটি অর্থনীতিই এই মন্দার ধকল কাটাতে ব্যর্থ হবে বলে পূর্বাভাস এসেছে। এই পাঁচটি অর্থনীতি হচ্ছে— বৃটেন, জার্মানী, ইটালি, ব্রাজিল ও মেক্সিকো। বৃটেনের অর্থনীতি দ্বিতীয় প্রান্তিকেও বাড়েনি। ইউরোপীয় অর্থনীতিবিদ এন্ড্রু কেনিংহাম সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, বিশ্বের ৪র্থ অর্থনীতি জার্মানির মন্দার পথে এগুচ্ছে। ব্রাজিল দ্বিতীয় প্রান্তিকেই মন্দায় ঝুঁকছে। মেক্সিকো এবং ইটালির অবস্থাও একই।

সিঙ্গাপুর এবং হংকং নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করে বিশ্লেষকরা বলেছেন, চীনের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ গোটা বিশ্ববাণিজ্যকেই অস্থির করে তুলেছে। আস্থার অভাব প্রকট হওয়ায় সম্ভাব্য মন্দা থেকে রেহাই পাওয়া সহজ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। বাণিজ্যযুদ্ধ যতটা গভীর হচ্ছে সে হিসেবে মন্দার দিকে এগুলেও তা উত্তরণে ভ্রুক্ষেপ নেই কারো। বড়ো বাণিজ্য অংশীদাররাও কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এবারের মন্দা গ্রাস করলে ছোটো অর্থনীতির দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বড়ো অর্থনীতির সঙ্গে যেসব ছোটো দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল— আইএমএফ বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমার আশঙ্কা করেছে। সংস্থাটি বলেছে, এবারে বিশ্ব অর্থনীতির ৩ দশমিক ২ শতাংশ হারে বাড়তে পারে। যা ২০০৯ সালের পর সর্বনিম্ন পূর্বাভাস। সংস্থাটি একই সঙ্গে বলেছে, ২০২০ সালে সাড়ে তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশাও পূরণ হবে না।

এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো আর্থিক খাতের তদারকিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমিয়ে গত ১১ বছরে সর্বনিম্ন হার ধার্য করেছে। ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকও পরিস্থিতি সামাল দিতে একই উদ্যোগ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। এশিয়ায় ভারত এবং থাইল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সুদের হার কমিয়েছে। এরইমধ্যে উত্পাদনমুখী খাতেও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে বড়ো ধরনের এক কঠিন পরিস্থিতির দিকেই এগুচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে শেয়ারবাজারে।

বৃহস্পতিবার শুরুতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শেয়ারবাজারে একদিনের ব্যবধানে তিন শতাংশ কমে যায় শেয়ারের দাম। যুক্তরাজ্যে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে প্রধান সূচক পড়ে যায় শুন্য দশমিক ৯ শতাংশ। যা আগের দিনের চেয়ে দেড় শতাংশ কম। জাপানের নিক্কি কমেছে এক দশমিক দুই শতাংশ। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে ইউরোপের শেয়ারবাজার স্থিতিশীল থাকলেও পালটা শুল্ক আরোপের খবরে দর পড়তে থাকে। বিবিসির সংবাদ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বন্ড মার্কেট হতে বিনিয়োগকারীরা পিছু হটছে। গত বুধবার থেকেই এ লক্ষণ দেখা দেয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৭ সালে অর্থনৈতিক মন্দার শুরুতেও বিনিয়োগকারীরা একই ভাবে বন্ড মার্কেট থেকে পিছু হটেছিল। পরিস্থিতি এখন অনেকটা সেরকমই। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা।

সর্বশেষ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যে নতুন করে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছু পণ্যে শুল্ক আরোপ বিলম্বিত করার ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ভিডিও গেম, কিছু খেলনা পণ্য, কম্পিউটার মনিটর এবং কিছু পাদুকা ও পোশাক পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিলম্বিত করা হয়েছে। বিশেষ করে আগামী ক্রিসমাসের বাজারে পণ্যের দামে যাতে উল্লম্ফন না ঘটে, সেজন্য ট্রাম্প প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।ইত্তেফাক