বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৩ শতাংশ, ইকনোমিস্টের পূর্বাভাস

করোনা কেবলমাত্র একটি সম্ভাব্য জনস্বাস্থ্য মহামারীই নয়, এটি বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেন এবং বাজারগুলিতেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। ভাইরাসের কারণে লকডাউনের যে অর্থনৈতিক ক্ষতি বিপর্যয় ডেকে আনবেন, এতে এক দশক আগে অর্থনীতির খারাপ সময়ের চেয়েও বিশ্বে আরও কঠিন মন্দা দেখা দিতে পারে। বিশ্ব জুড়ে শুরু হয়ে গেছে মন্দা। এবারের মন্দা ২০০৯-এর মন্দাকেও ছাড়িয়ে যাবে।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব কটি দেশেই নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে। ঘনবসতি, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অসচেতনতা, ভারসাম্যহীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এই অঞ্চলকে করোনাভাইরাস মহামারির সবচেয়ে খারাপ প্রভাবের ঝুঁকিতে ফেলেছে। প্রাদুর্ভাবের বিস্তার রোধে প্রতিরোধমূলক যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তার অর্থনৈতিক ক্ষতি ব্যাপক হবে বলে মনে করছে লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। তারা আশা করছে, প্রতিটি দেশই রাজস্ব ও আর্থিক প্রণোদনা পদক্ষেপ নেবে। তবে দেশভেদে এই পদক্ষেপের পরিধি আলাদা হবে।

দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট মনে করছে, এ জটিল অবস্থায় চলতি বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৩ শতাংশ, যা আগে সাড়ে ৭ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছিল।

এক বিশ্লেষণে দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, বাংলাদেশ ও ভারত তাদের শক্তিশালী অথনৈতিক অবস্থানের কারণে তুলনামূলক বেশি প্রণোদনা সরবরাহ করতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় প্রণোদনার ধরন কিছুটা সীমিত হবে।

তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ভারতে প্রতি ১ হাজার জনের জন্য চিকিৎসক ছিল শূন্য দশমিক ৮ জন। অর্থাৎ, একজনেরও কম। পাকিস্তানে তা শূন্য দশমিক ৯ জন, শ্রীলঙ্কায় ১ দশমিক ১ জন। অন্যদিকে শিল্পোন্নত দেশের জোট জি–৭–ভুক্ত দেশগুলোতে যা ৩ জন। হাসপাতালে ১ হাজার মানুষের জন্য শয্যা রয়েছে ভারতে শূন্য দশমিক ৫টি, পাকিস্তানে শূন্য দশমিক ৬টি, শ্রীলঙ্কায় ৩ দশমিক ৬টি এবং জি–৭–ভুক্ত দেশে ৩ দশমিক ৬টি। ভারতে একজন মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করা হয় ৮৩ ডলার। পাকিস্তানে ৩৩ ডলার, শ্রীলঙ্কায় ১৬১ ডলার। অন্যদিকে জি–৭–ভুক্ত দেশে তা ৭ হাজার ২৩০ ডলার। তাই এ পরিস্তিতি নিয়ে এমন একটি প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো এ অঞ্চলের জন্য কঠিন।

দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট আশঙ্কা করছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ অঞ্চলে চলতি বছর প্রবৃদ্ধি অনেকই কমবে। জনগণের চলাচল কমাতে সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার কারণে ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ায় একটা বড় ধাক্কা লেগেছে চাহিদার দিক দিয়ে—এতে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেরই প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। এরপর কারখানা ও ব্যবসা–বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর গিয়ে পড়েছে আরেকটি ধাক্কা। পরে যা চাহিদার ওপর আরেক ধরনের ধাক্কা দেবে। বিশ্বজুড়ে একই পদক্ষেপ নেওয়ায় তা রপ্তানি চাহিদাও সীমাবদ্ধ করে দিচ্ছে। ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো ভ্রমণে সীমাবদ্ধতা আনার জন্য ও চাহিদা কমে যাওয়ায় পর্যটক আগমন বন্ধ করে দিয়েছে। ভোক্তার পক্ষ থেকে চাহিদা কমে যাওয়া, সেই সঙ্গে রপ্তানি কমে যাওয়ায় নিয়মিত ব্যবসায়িক আয় কমবে। ফলে কোম্পানিগুলো তাদের নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না এবং বিনিয়োগের যে পরিকল্পনা ছিল, তা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ও সরকারপ্রধানেরা মহামারির অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটাতে বিভিন্ন পুনরুদ্ধার প্যাকেজ ঘোষণা করছে। তবে এসব পদক্ষেপে অর্থনৈতিক ক্ষতি খুব বেশি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে, তা বিশ্বাস করা কঠিন। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদের সুদহার কমিয়েছে এবং আর্থিক খাতে তারল্য নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে।

দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট মনে করছে, এ জটিল অবস্থায় চলতি বছর ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ২ শতাংশ, যা আগে ৬ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি থমকে যাবে। কোনো প্রবৃদ্ধিই হবে না দেশটিতে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৩ শতাংশ, যা আগে সাড়ে ৭ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করছে দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।