করোনা: আর্থিক সংকটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় টানা ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটে পড়েছে রাষ্ট্রয়াত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এখন পরিচালন ব্যয় মেটানো নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

পরিস্থিতির উন্নতি হলে সরকার যদি আর্থিক সহযোগিতা না দেয়, তাহলে ফ্লাইট অপারেশনে যেতে পারবে না বিমান, এমনটাই জানিয়েছেন এয়ারলাইন্সটির কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে সরকারের কাছে ৬২৮ কোটি টাকার আবদারও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি আর্থিক সংকটের কথা তুলে ধরে সাহায্য চেয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

এতে বিমানের বর্তমান আর্থিক ক্ষতি ও তারল্য সংকট তুলে ধরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ৬২৮ কোটি টাকা দিতে বলা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আয় না থাকলেও বিমানের প্রতিমাসে ৬২৮ কোটি টাকা নির্ধারিত খরচ রয়েছে। বিমানের মাসিক স্থায়ী পরিচালন ব্যয় ২০৩ কোটি টাকা, উড়োজাহাজের ঋণের কিস্তি ৬১ কোটি, প্লেনের লিজ ভাড়া ৯৮ কোটি টাকা ও বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ২৬৬ কোটি টাকা।

তথ্য মতে, গত দুই মাস ধরে অসংখ্য ফ্লাইট বাতিল ও ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। ফ্লাইট স্থগিত করা রুটে কোনো ধরনের চার্জ না কেটেই টিকিটের টাকা যাত্রীদের ফেরত (রিফান্ড) দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বিমানের কাছে কোনো নগদ টাকা নেই। তাই এপ্রিল মাসে কর্মীদের বেতনসহ নানা স্থায়ী খরচ চালাতে সরকারের কাছে ৬২৮ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া মাসখানেক ধরে ফ্লাইট পরিচালনা একেবারেই বন্ধ রয়েছে।

বিমান বলছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারির তুলনায় ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে যাত্রীসংখ্যা কমেছে ১৫ শতাংশ। একইভাবে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যাত্রী কমেছে ৫৮ শতাংশ। করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় ও বিভিন্ন দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির কারণে মার্চে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে বিমানের মোট ৬৯৮টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালে কার্গো পণ্য ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করে গড়ে প্রতি মাসে ৭৫ কোটি টাকা আয় করতো বিমান। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে গড়ে আয় হয়েছে মাসে ৩০ কোটি টাকা। এসব কারণে মার্চে বিমানের রাজস্ব আয় কমেছে ৪০০ কোটি টাকা। সে কারণে বর্তমানে পরিচালন ব্যয়ের জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, বিমান আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। অামরা প্রধানমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করবো।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, করোনার কারণে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে এ খাত। সবগুলো উড়োজাহাজ বন্ধ রয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই আয় কমেছে।

উল্লেখ্য, বিমানের বহরে মোট ১৮টি প্লেন রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি নিজস্ব ও ৬টি লিজে আনা।