মহামারী করোনাকালে আমদানি বেড়েছে ফলের

মহামারী করোনার এ সময় স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। অপ্রয়োজনীয় খরচও কমিয়ে দিয়েছেন নানা শ্রেণি–পেশার লোক। তবে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ফল খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন কমবেশি সবাই। এ কারণে ফল আমদানিও বেড়ে গেছে এ করোনাকালে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশি ফলের আমদানির তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

বিদেশি ফলের আমদানি যখন বেড়েছে, তখন দেশীয় ফলের ভরা মৌসুম চলছে। দেশীয় টাটকা ফলের চাহিদা বেশি থাকে এ সময়। এরপরও কমেনি বিদেশি ফলের চাহিদা। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানির তথ্য অনুযায়ী, মার্চ–জুন এই চার মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বিদেশি ফলের আমদানি বেড়েছে ১৮ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশি ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় আপেল ও মাল্টা। এ দুটি ফলের পরে আছে কমলা, আঙুর, নাশপাতি ও ডালিম। মার্চ–জুন সময়ে আপেল আমদানি ৪৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টনে। একইভাবে কমলা–আঙুর, নাশপাতি, ডালিম আমদানি ৯২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৯০৭ টনে। অবশ্য করোনার সময়ে বিশ্বে মাল্টার মৌসুম ছিল শেষ দিকে। মৌসুম না থাকায় এ সময় মাল্টা (অরেঞ্জ) আমদানি কিছুটা কমে ৫২ হাজার টনে নেমেছে। মাল্টা কিছুটা কমলেও মোট ফল আমদানির হিসাবে বেড়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মেহেদী মাসুদ বলেন, কয়েক বছর ধরে ফল খাওয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। করোনার কারণে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের মধ্যে এ আগ্রহ আরও বেড়ে গেছে। মানুষের আগ্রহ বাড়ার কারণে আমদানিও বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। তবে আমদানি করা বিদেশি ফলের পাশাপাশি দেশীয় ফল খাওয়ার হারও বেড়েছে। এ কারণে কৃষকেরা এবার ফল বিক্রি করে নায্যমূল্য পাচ্ছেন।

বিদেশি ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় আপেল ও মাল্টা মার্চ–জুন সময়ে আপেল আমদানি ৪৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টনে বিদেশি ফলের আমদানি বাড়ায় বৈশ্বিক আমদানির তালিকায়ও উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আপেল আমদানিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে। তিন বছর আগে এ তালিকায় বাংলাদেশ ছিল সপ্তম অবস্থানে। পণ্যের বাজার পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ইনডেক্সমুন্ডির তথ্য অনুযায়ী, মাল্টা আমদানিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন পঞ্চম। তিন বছর আগে ছিল অষ্টম অবস্থানে।

কয়েকজন আমদানিকারক ও বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক ফল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদেশি ফলের দাম এখন মানুষের হাতের নাগালে। এ কারণে ফল খাওয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। বর্তমানে ১০০ টাকা দিয়েও এক কেজি আপেল কেনা যায়। কারণ, মান ও জাতভেদে বাজারে আপেলের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। আবার মাল্টাও বছরের বেশির ভাগ সময় কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বেচাকেনা হয়। অবশ্য এখন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কেজিপ্রতি দাম ১৬০–১৮০ টাকা হয়েছে। এরপরও মানুষ কিনছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও এখন বিদেশি ফলের বাজার বিস্তৃত হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফল আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিদেশি ফলের চাহিদা কমবেশি সারা বছরই থাকে। দিন দিন সেই চাহিদা আরও বাড়ছে। এ কারণে বাড়ছে আমদানিও। তবে এবার করোনা ও রোজা মিলিয়ে ফল আমদানি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। দাম হাতের নাগালে থাকায় সব শ্রেণি–পেশার মানুষের এখন ফল কেনার আগ্রহ বেশি বলে জানালেন তিনি।

বিদেশি ফলের চাহিদা বাড়ায় দেশে এখন মাল্টা, ড্রাগনসহ অনেক বিদেশি ফলের আবাদ শুরু হয়েছে। প্রধান ছয়টি ফলের মধ্যে দেশে সবুজ মাল্টার উৎপাদন বাড়ছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বছরে আনুমানিক ২০ হাজার টন মাল্টা উৎপাদন হচ্ছে। আবার আপেলের বিকল্প বড় আকারের কূল উৎপাদনও বাড়ছে।

কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর বিদায়ী ২০১৯–২০ অর্থবছরের হিসাব এখনো চূড়ান্ত করেনি। তবে সংস্থাটির হিসাবে, এক বছর আগে ২০১৮–১৯ অর্থবছরে দেশে সোয়া এক কোটি টন ফল উৎপাদন হয়েছে। এ বছর তা সাত থেকে আট শতাংশ বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে বছরব্যাপী ফল উৎপাদন প্রকল্পের পরামর্শক কৃষিবিদ এস এম কামরুজ্জামান বলেন, ফল আমদানি বা উৎপাদন বাড়ার অর্থ, মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়ছে। করোনার সময় মানুষ বেশি ফল খাচ্ছে। সুস্থ থাকতে হলে পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি ফল খেতে হবে, মানুষের মধ্যে এই উপলব্ধি এসেছে। তিনি জানান, দেশীয় ফলের পাশাপাশি বিদেশি অনেক ফলের আবাদ শুরু হয়েছে দেশে। আরও কিছু ফল চাষের বিষয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষাও চলছে। এভাবে চললে ফলের জন্য বিদেশের ওপর খুব বেশি নির্ভর করতে হবে না। অবশ্য এ জন্য সরবরাহব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে, যাতে মধ্যস্থতাকারীদের চেয়ে কৃষকেরা দাম বেশি পান।