আজ রুনা লায়লার ৬৭তম জন্মবার্ষিকী

ভারত, বাংলাদেশ, ও পাকিস্তানের জনপ্রিয় কিংবদন্তিতুল্য কণ্ঠ শিল্পী রুনা লায়লার ৬৭তম জন্মবার্ষিকী আজ ১৭ নভেম্বর। পরিবারের সদস্য ও একান্ত প্রিয় কয়েকজনের সঙ্গে দিনটি উদ্যাপন করবেন তিনি। তবে এই জন্মদিন তাঁর কাছে বিশেষ। কারণ, এর সঙ্গে বেশ কিছু প্রাপ্তিযোগ রয়েছে।

আলমগীর পরিচালিত একটি সিনেমার গল্প চলচ্চিত্রে প্রথম সুর করে শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে রুনা লায়লা পেতে যাচ্ছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে আপন কে পর-এর আজ রোববারের পর্বটি রুনা লায়লাকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে। আজ রাত ১০টায় দেখানো হবে বিশেষ এ পর্ব। গতকাল শনিবার তাঁর সুরারোপিত এবং গাওয়া ‘ফেরাতে পারিনি’ গানটির মিউজিক ভিডিও অবমুক্ত হয়েছে ধ্রুব মিউজিক স্টেশন থেকে। গানটিতে একজন মডেল কণ্ঠশিল্পী হিসেবে দেখা যাবে তাঁকে।

এখানেই শেষ নয়; আগামী ১৩ ডিসেম্বর সিটি ব্যাংকের প্রযোজনায় আসছে ‘রুনা লায়লা ফিচারিং লিজেন্ডস ফরএভার’ শিরোনামে পাঁচটি গানের মিউজিক ভিডিও। গানগুলো সুর করেছেন রুনা লায়লা। গেয়েছেন উপমহাদেশের বরেণ্য শিল্পী আশা ভোসলে, রাহাত ফতেহ আলী খান, হরিহরণ, আদনান সামি ও রুনা লায়লা নিজে। এত বড় একটি কাজ কীভাবে সম্পন্ন হলো, জানিয়েছেন তিনি, ‘আসলে গত পাঁচ দশক শিল্পী হিসেবেই মানুষের ভালোবাসা পেয়ে আসছি। সুর করার ব্যাপারে আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছেন আলমগীর সাহেব। তাঁর প্রযোজনা ও পরিচালনায় একটি সিনেমার গল্প চলচ্চিত্রের জন্যই আমার প্রথম সুর করা। গানটি লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। গেয়েছেন আঁখি আলমগীর। এ কাজ করতে করতেই ধ্রুব মিউজিক স্টেশন থেকে আরও কিছু গান সুর করার প্রস্তাব পাই। “ফেরাতে পারিনি” ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে। বাকিগুলো মুক্তির অপেক্ষায়। গেয়েছেন এ প্রজন্মের শিল্পী তানি লায়লা, আঁখি আলমগীর, হৈমন্তী রক্ষিত ও লুইপা।’

রুনা লায়লা জানান, তাঁর সুরে দেশের শিল্পীদের গাওয়া গানগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ডেইলি স্টার-এর স্টার শোবিজ ও আনন্দধারা সম্পাদক রাফি হোসেন বলেন, ‘আপনার সুরে তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনের শিল্পীরাও গাইতে পারেন। তাহলে গানগুলো আরও বেশি আলোচিত হবে।’

তখনই বিষয়টা রুনা লায়লাকে ভাবায়। তিনি বলেন, ‘এরপর বসে বসে আমি পাঁচ-ছয়টা গান সুরও করি। গানগুলো হবে বাংলা ও হিন্দিতে। যদি সুস্থ থাকেন এবং রাজি থাকেন, তাহলে লতা মঙ্গেশকরকেও দিয়ে একটি গান গাওয়ার পরিকল্পনা করি।’

রুনা লায়লা আরও বলেন, ‘এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় সিটি ব্যাংক। ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার এবং প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন সহযোগিতা করতে রাজি হন। তবে সিদ্ধান্ত হয়, গানগুলো হবে বাংলায়। শিল্পীদের সঙ্গে আমি ফোনে যোগাযোগ করলে সবাই এক বাক্যে রাজি হয়ে যান। পাঁচটি গানের সুর আমি আগেই করেছিলাম। সুরের ওপর দুটি গান মনিরুজ্জামান মনির ও তিনটা গান কবির বকুল লিখে দেন। গানগুলো খালি গলায় গেয়ে আমি শিল্পীদের কাছে পাঠিয়ে দিই। শুনে তাঁরা পছন্দ করেন এবং ফোন করে প্রায়ই জানতে চান, কবে ভয়েস রেকর্ড করব। তাঁদের আগ্রহ দেখে আমার ভীষণ ভালো লাগে। কারণ, এ রকম একটা কাজে সবার সহযোগিতা পাচ্ছি।’

গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি লন্ডনে পাঁচটি গানের ট্র্যাক তৈরির কাজ শুরু হয়। সংগীতায়োজনে ছিলেন রাজা কাশ্যপ। লতা মঙ্গেশকর অসুস্থ থাকায় গানটি তাঁর গাওয়া হয়নি। সবার পরামর্শে সেই গান করেন রুনা লায়লা। এ ছাড়া আদনান সামির সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠেও গান তিনি। দুটি গানের ভয়েস রেকর্ড হয় লন্ডনে। বাকি তিনটি গানের ভয়েস রেকর্ড হয় মুম্বাই। প্রথম কণ্ঠ দেন হরিহরণ। এরপর আদনান সামি। এরপর আশা ভোসলে।

রুনা লায়লা বলেন, ‘আশা ভোসলে ৮৭ বছর বয়সেও যেভাবে গানটি গাইলেন, গায়কির মধ্যে বয়সের কোনো ছাপই পেলাম না। তিনি যে কত বড় মাপের শিল্পী, তা আরও ভালো করে জেনেছি সেদিন। এখনো রাহাত ফতেহ আলী খানের গানটির ভয়েস রেকর্ড হয়নি। আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যে হয়ে যাবে।’

সব কটি গানের মিউজিক ভিডিওর নির্মাণকাজ চলছে। করছেন শাহরিয়ার পলক। আগামী ১৩ ডিসেম্বর সিটি ব্যাংকের দশম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে পাঁচটি গানের মিউজিক ভিডিও অবমুক্ত করা হবে। সেদিন যাঁরা গেয়েছেন, অনুষ্ঠানে তাঁদের দু-একজনের উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

গানটি গাইতে না পারলেও রুনাকে অডিওবার্তা পাঠিয়েছেন লতা। রুনা লায়লা বললেন, ‘সেই অডিওবার্তায় তিনি আমাকে আশীর্বাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশের সব মানুষকে প্রণাম ও ভালোবাসা জানিয়েছেন। এ এক পরম পাওয়া। যেদিন এ গানগুলো প্রকাশিত হবে, সেদিন আমার একটা বিরাট স্বপ্ন পূরণ হবে।’